বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, যেসব রাজনৈতিক দল অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছিল, এক পর্যায়ে তারা হারিয়ে গেছে।
তারা মনে করেন, একটি রাজনৈতিক দল যদি স্বাভাবিক নিয়মে গঠিত হয় এবং তার যদি যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব থাকে। তাহলে সেই রাজনৈতিক দল টিকে থাকে আর জনগণ সমর্থন করলে একসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও যেতে পারে। আর অগণতান্ত্রিক পথে গড়ে ওঠা দল এক সময় ধ্বংস হয়ে যায়।
তাই অস্বাভাবিকভাবে বিএনপি গড়ে ওঠার কারণে এবং অযোগ্য ও দুনীর্তিগ্রস্তরা নেতৃত্বে থাকায় দলটি দেশের মানুষের কাছে থেকে ছিটকে পড়েছে।
জনবিছিন্ন হওয়ার কারণে বিএনপি এখন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিএনপি এখন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের জন্য দেশ-বিদেশে ইমেজ সংকটে আছে। তাছাড়া বিএনপির নেতৃত্বদানকারী নেতা তারেক জিয়াকে দলের নেতাকর্মীরাই পছন্দ করেন না এবং তার উপরে নেতাকর্মীদের বিশ্বাস নেই। তাই তারেক জিয়া আন্দোলন সংগ্রামে বহুবার ডাক দিয়েও নেতাকর্মীদের সাড়া পাননি। লাইফ সাপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিএনপির এখন প্রথম কাজ হচ্ছে দলের মূল নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে ইমেজ সংকট দূর করা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এক অনুষ্ঠানে বলেন, যে দলের মূল নেতারা দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন থাকে, দেশের মানুষ তাদেরকে চায় না। বিএনপির মূল নেতৃত্বই দুর্নীতিতে জড়িত। ফলে এখন তারা রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। জনগণের জন্য রাজনীতি না করলে তারা কোনো দিনই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
বিএনপির আন্দোলনে মানুষের সমর্থন নেই। বিএনপির আন্দোলনের ইস্যু তামাদি হয়ে গেছে। তারা আন্দোলনের ডাক দিলেও জনগণ এখন সাড়া দেবে না।
একটি জরিপে বিএনপির নবীন-প্রবীণ রাজনীতিকরা ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই জরিপে অর্ধেকের বেশি মানুষ তারেক রহমানের ওপর সন্তুষ্ট নয়।
তাদের মতে, তারেক রহমানের কারণেই দলটির এই বিপর্যয়। তারা তারেকের হাতে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়াকে ভালোভাবে নেননি। তাদের মতে, দলে কাউন্সিল করে একজন সিনিয়র নেতাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিলে দল আরো উজ্জীবিত থাকত। গত নির্বাচনে ড. কামালকে যুক্ত করায় অনেকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৬৭ ভাগই বলেছেন, বিগত সব নির্বাচনে বিএনপি যদি ঠিকমতো অংশ নিত, তাহলে দলের এই ভয়াবহ বিপর্যয় হতো না। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় আসনে একটা সম্মানজনক অবস্থা থাকত। তাছাড়া দেশের জনগণ বিএনপির উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলছে, কারণ এ দলটি দুর্নীতিগ্রস্ত।
গত এক দশকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাথে এর চরমপন্থী মিত্র জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছে। যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিবাদের নামে রাজপথে সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সহিংস ও প্রাণঘাতী হামলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ও তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা ইত্যাদি।
এসকল কাজে তারা প্রায়ই জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি এবং হরকাতুল জিহাদের মতো সহিংস চরমপন্থী সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে।
২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন গণপরিবহন- বাস, ট্রাক, অটোরিক্সা, ইজিবাইকের যাত্রীদের উপর পেট্রোল বোমা এবং ককটেল হামলা করে হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। আর এসব কর্মকাণ্ডের কারণেই বিএনপি আজ দেশের মানুষের সমর্থন হারিয়েছে।