মিজানুর রহমানঃ
কোভিট ১৯ অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্ব আজ থেমে আছে । গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে।
দেশে প্রথম কোভিট-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ( আইইডিসিআর ) জানায়,বাংলাদেশে সিমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সেই সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে –১৬৮৬৪৫ -এক লক্ষ আটষট্টি হাজার ছয়শত পঁয়তাল্লিশ জনে।
মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছে দেশে – ২১৫১ – দুই হাজার একশত একান্ন জনে । সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে এরপর সরকারি – বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগও বন্ধ হয়ে যায়। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন। সরকারি চাকুরিজীবীরা বেতন পাচ্ছেন।
এই সময় সবচেয়ে বেশি বেকায়দা পড়েছেন সমাজের শিক্ষিত বেকারা। গত তিন চার মাসে এদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। লেখাপড়া শেষে বারবার চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়া মানুষগুলো সমাজে শিক্ষিত বেকার নামে পরিচিত।
সর্বোচ্চ সার্টিফিকেট নিয়েও অনেক সময় লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পেরে হতাশায় থাকেন এরা। নিজে ও পরিবার কে বাঁচাতে ঢুকে যায় খন্ডকালীন পেশা টিউশনিতে। অনেকে দু- চারটা টিউশনির পয়সা দিয়ে চাকরির আবেদন করার খরচ জোগায়।
সমাজের মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার খরচ চালাতেই টিউশনিতে ঢুকে পড়েন। কেউ কেউ লম্বা সময় চেষ্টার পর চাকরিতে সুযোগ না পেয়ে শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠান কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নেয়। এরা অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত।
অথচ করোনাকালে কর্মহীন হয়ে এরা বেকায়দা পড়েছেন। দেশের এই বিশাল শিক্ষিত বেকার গোষ্ঠী তিনটি স্তরে কাজ করতেন। প্রথমত প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ / বিশ্ববিদ্যালয়), দ্বিতীয়ত কিন্ডারগার্টেন ( কেজি স্কুল), তৃতীয়ত কোচিং সেন্টার। সমাজে এরা এমনিতেই বেকার হিসেবে পরিচিত। প্রাইভেট স্কুলগুলোকে সরকার বই- খাতা সনদ দিয়ে প্রাথমিকভাবে অনুমতি দিয়ে থাকেন।
এ ছাড়া কোচিংগুলোর উপরও কখনো সরকার চুড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। অতএব এটি শিক্ষার শক্তিশালী একটি অংশ। তারপরও সবসময় এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাবে চাপে থাকে। এসব শিক্ষকরা শিক্ষাদানে একদিকে সরকারকে সহোযোগিতা করছেন অন্যদিকে বেকারত্ব দুর করছেন। এদের পাশে সরকারের সহযোগিতা থাকাটা জরুরি।
বর্তমানে করোনাকালে এসব শিক্ষিত কর্মহীনদের পাশে না দাঁড়ালে মানুষের শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছেই থাকবে না। গত ১৬ মার্চ সরকারের নির্দেশে হঠাৎ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলো । আমরা সরকারের সাথে সাড়া দিয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলাম। অথচ ৯৯ ভাগ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাড়া বাড়ীতে কার্যক্রম চালায়।
আয়ের ৪০ ভাগ ঘর ভাড়া, ৪০ ভাগ সম্মানিত শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দের বেতন ভাতা, ১০ ভাগ বিদ্যুৎসহ প্রচারণায় খরচ হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় চলে এসেছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত এই বৃহৎ গোষ্ঠীকে বাঁচাতে এই লম্বা সময় প্রাইভেট বা বেসরকারি শিক্ষকদের পাশে সরকারি সহোযোগিতা জরুরি।