আনোয়ার হোসেন আন্নুঃ
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ যে শুধু মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তা নয়, তাদের জীবিকা নিয়েও টান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনার জেরে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের নাম উঠবে গরিবের তালিকায়। একটি আন্তর্জাতিক দলের গবেষণায় এই উদ্বেগজনক খবর উঠে এসেছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের অধীন ‘ইউএনইউ-ওয়াইডার’ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। গবেষকদলে ছিলেন লন্ডনের কিংস কলেজ ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদরা। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য, করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে গরিবরা আরও গরিব হবে। প্রায় ৪০ কোটি মানুষ চরমতম দারিদ্র্যের শিকার হবে, যাদের আয় হবে দিনে ১৪৪ টাকা। আগামী দিনে বিশ্বে দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছে যাবে বিশ্বের অন্তত ১১২ কোটি মানুষ। আর বেশি দরিদ্রের মাত্রায় গরিব হয়ে পড়বে অন্তত ৩৭০ কোটি মানুষ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে এটাই হতে চলেছে আগামী দিনে বিশ্বের দারিদ্র্যের চিত্র। সমগ্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছিল, করীনার জেরে বিশ্বে চরমতম দারিদ্র্যের শিকার হবে ৭ থেকে ১০ কোটি মানুষ। চরমতম থেকে খুব দরিদ্র, বিভিন্ন ধরনের দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের জন্য মানুষের গড় দৈনিক আয়ের যেসব মাত্রা বিশ্বব্যাংক নির্ধারণ করেছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই এই গবেষণা চালানো হয়েছে। যাদের আয় দিনে ১৪৪ টাকা ২৪ পয়সা (১.৯০ ডলার) বা তারও কম, বিশ্বব্যাঙ্কের সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা চরমতম দারিদ্র্যের শিকার। যেসব মানুষের আয় দিনে ৪১৭ টাকা ৪১ পয়সা (৫.৫০ ডলার), তাদের বলা হয় বেশি দরিদ্র। গবেষকরা জানান, পরিস্থিতির সর্বাধিক অবনতিতে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের গড় বাৎসরিক আয় কমে যাবে কম করে ২০ শতাংশ।গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চরমতম দারিদ্রেও ‘বৈষম্য’ থাকবে এলাকাভেদে। কোথাও সেটা সংখ্যায় কম হবে। কোথাও বেশি। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। তার মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে জনবহুল দেশ ভারতের নাম। তার পরেই রয়েছে সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলি। গোটা বিশ্বে যে ১১২ কোটি মানুষ চরমতম দারিদ্র্যেরর শিকার হবে, তাদের এক-তৃতীয়াংশই আফ্রিকার ওই দেশগুলোর নাগরিক। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অ্যান্ডি সামনার বলেন, ‘লকডাউনের ফলে প্রতি দিন গরিবদের আয় যেভাবে মার খাচ্ছে, তা পূরণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে কোঙ কল্যাণমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারে, তা হলে গোটা বিশ্বেই গরিবদের ভবিষ্যত বলে কিছু থাকবে না।