নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: দুই দিনের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ৮টি ইউয়িনের অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আউশের বীজতলা ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট নিমজ্জিতসহ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
গত সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নেত্রকোনা জেলা-কলমাকান্দা সড়কের গুতুরা থেকে বাহাদুরকান্দা পর্যন্ত সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সে.মি. উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার সাথে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সংযোগ সড়কের অধিকাংশ স্থানে ২-৩ ফুট ওপর দিয়ে পানি বইছে এবং উপজেলায় ডোরিয়াকোনা সার্বজনীন কবরস্থান ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কলমাকান্দা সদর, বাসাউড়া, মন্তলা, চানপুর, আনন্দপুর, রঘুরামপুর, বিশরপাশা, নাগডড়া, পাঁচগাঁও ধারাপাড়া, নয়াচৈতা, রামনাথপুর, নক্লাই, নতুনবাজার, তেলীগাও, বাঘারপাড়, বিষ্ণুপুর, শিবনগর, বাউশাম, সুন্দরীঘাট, ভাষানকুড়া, রহিমপুর, কান্তপুর, নলছাপ্রা, পাঁচকাঠা, ভাবানীপুর, শিবনগর, বালুছড়া, ইয়ারপুর, গোড়াগাও, গোয়াতলা, কৈলাটী, শুনই, গোবিন্দপুর, বড়ইউন্দ, কেশবপুর, সালেঙ্গা, কুতিগাও, ভাটিপাড়া সহ আরো অনেক গ্রামের খাল-বিল ও জলাশয়সমূহ পানিতে ডুবে গেছে।
উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের মহাদেও নদীতে তীব্র পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর গর্ভে ১০টি বসতঘর ধসে পড়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও আতাউল হক গণি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ জানান, গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ মি.লি. এবং এরপর থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৫৫ মি.লি. এ নিয়ে ১২৫ মি.লি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে গত দু’দিনে। এ পানিতে প্রায় ১৪ একর আউশ ধানের বীজতলাসহ প্রায় ৫১০ হেক্টর আউশ ধান চাষকৃত জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. অনিক রহমান জানান টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় তিন শতাধিক পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি হলে আরো মৎস্য চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি বৃদ্ধি পেলে পাহাড়ি ঢলে কলমাকান্দা উপজেলায় বড় বন্যার আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে জানান, বন্যার্তদের মধ্যে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হবে । তাছাড়া এ দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তারা জানান।