নিরেন দাস,জয়পুরহাট,জেলা প্রতিনিধিঃ-
সারাদেশের তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাশীল দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের ৫ জন প্রার্থীই নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও মাত্রাই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধক্ষ্য মো.মানোয়ার হোসেন আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করাই অধক্ষ্য মো.মনোয়ার হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তাকে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরে মানোয়ার হোসেনের তার সমর্থকরা নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত ও নির্বাচন বানচাল করার লক্ষে নির্বাচনী কেন্দ্র গুলিতে তার সমর্থকরা সকাল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়ে নৌকার প্রতীকের সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে কেন্দ্র গুলো তার দখলে নিলে সকাল থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এভাবে থাকলে এক পর্যায়ে জয়পুরহাট র্যাব-৫ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. তৌকিরের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা প্রতিটি কেন্দ্রে কঠোর অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এরপর থেকেই মাত্রাই ইউনিয়নের মানুষেরা আস্থা ফিরে পায়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত ভিত্তিতে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনীত ভিত্তিতে তারা ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়। এই নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ১৫ জন ও সাধারণ সদস্য ৪৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। আবার অনেকেই বিনা-প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। একই ভাবে পুনট ইউপির ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য এবং সাধারণ ইউপি সদস্য ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও জিন্দারপুর ইউনিয়নের ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
গত ২৮ শে নভেম্বর রাত ১০ টায় কালাই উপজেলা পরিষদ হল রুম থেকে কালাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম
বে-সরকারিভাবে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলের এ তথ্য জানান।
অনুযায়ী, উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বে-সরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আ.ন.ম.শওকত হাবিব তালুকদার লজিক। তিনি (নৌকা) প্রতীকে পেয়েছেন ৯ হাজার ২শ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমানে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত (আনারস) প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অধক্ষ্য মো. মনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৮ হাজার ৪শ ৯১ভোট। এ ইউনিয়নে ভোটাদের ভোট প্রদান মোট ১৮ হাজার ৫১ জন। ভোট ৭৮.৯৫ শতাংশ।
উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.ওয়াজেদ আলী দাদা নৌকা। তিনি (নৌকা) প্রতীকে পেয়েছেন ১৪ হাজান ৭শ ৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.তারেকুল ইসলাম সরকার মিলন (মশাল) প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৫শ ১৪ ভোট। এ ইউনিয়নে ভোটাদের ভোট প্রদান মোট ১৭ হাজার ২শ ২১ জন। ভোট ৭৮.৭৫ শতাংশ।
উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.জিয়াউর রহমান জিয়া। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ হাজার ১শ ৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক মো. আব্দুস সবুর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটর-সাইকেল) প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১শ ৭৭ ভোট। এ ইউনিয়নে ভোটাদের ভোট প্রদান মোট ১৬ হাজার ৮শ ৭৭ জন। ভোট ৭৮.১৭ শতাংশ।
উপজেলার আহম্মোদাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.আলী আকবর আলী। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫শ ২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহম্মোদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডল কালাম স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটরসাইকেল) প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ২শ ৬৮ ভোট। এ ইউনিয়নে ভোটাদের ভোট প্রদান মোট ১১ হাজার ৯৮ জন। ভোট ৮৪.১৪ শতাংশ।
উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং অনুষ্ঠিত নৌকা প্রতীকের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা,আওয়ামীলীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে এই নির্বাচনে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমি এর আগেও পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল এবার দিয়ে তৃতীয় বার চেয়ারম্যান হলাম। তিনি আরো বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো নৌকা প্রতীক দিয়ে তিনি আমাকে নৌকা প্রতীকের সুনাম রক্ষার্থে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমার প্রাণপ্রিয় মাত্রাই ইউনিয়ন বাসী ভোট দিয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করাই আমি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে বলেন,আমি আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াই জেলা,উপজেলা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে আরো সু-সংগঠিত করাসহ আমার এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।
কালাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বরে কালাই উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৮০ জন প্রার্থী ছিলেন। তার মধ্যে উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ডিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। একই ভাবে পুনট ইউপির ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য এবং সাধারণ ইউপি সদস্য ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও জিন্দারপুর ইউনিয়নের ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিনা-প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৯ জন প্রার্থীরা নির্বাচন করেন। এদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য ৪২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৬ জন প্রার্থীও নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
তিনি আরও বলেন,এই নির্বাচন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে একটানা ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৪৭টি ভোট কেন্দ্রের ২শ ৭৭টি ভোটকক্ষে ব্যালট পেপার এরমাধ্যমে ভোটারা ভোটা প্রদান করেন। এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এক লাখ, তিন হাজার ৪শ ৮৬ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ৮ জন এবং মহিলা ভোটার ৫২ হাজার ৪শ ৭৮ জন। সকল ভোটকেন্দ্রে ৪৭জন প্রিজাইডিং, ২শ ৭৭জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ৫শ ৫৪জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করেন। এই নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।
তাছাড়া জয়পুরহাট র্যাবের-টিম ও বিজিবির টহল দলসহ সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া ও নির্বাচনের সময়ে কোনো প্রকার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসা এবং ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে সব উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ও ব্যাপক প্রস্তিতি নেওয়া হয়। এ নির্বাচনে পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ও ব্যাপক প্রস্তিতি নেয়া হয়েছিল বলেও তিনি জানান।