ইমাম হোসেন জীবন ক্রাইম রিপোর্টার চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার আন্তর্জাতিক চট্টগ্রাম খুলশী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭
র্যাব-৭ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ
আইন-শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। র্যাব-৭ চট্টগ্রামে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাত, দর্শক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি,বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার,মাদক উদ্ধার, অপহরণকারী ও প্রতারকদের
গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
পত্র-পত্রিকার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল যে,একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর নামে ইন্ডিয়াতে মানব পাচার করে আসছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রামে সংঘবদ্ধ পাচারকারী দলটিকে শনাক্তকরণের জন্য তৎপরতা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ইং বিকাল ৫ ঘটিকায়
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি অভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসের নিকট অভিযান পরিচালনা করে,
র্যাব সদস্যের উপস্থিতি টের পেয়ে চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে র্যাব-৭ সদস্যরা ,আসামি (১) মো.আলী ডালিম (৩৫), (২)মো. আতিকুর রহমান রনি (৩৬) ( ৩) মো.আলম হোসেন(৩৮) আটক করতে সক্ষম হয়।পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,তারা সাইফুল ইসলাম নামের একজন অসহায় লোককে চার লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কিডনি বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করছে। তাকে ইন্ডিয়াতে পাচার করার জন্য আসামিরা তার পাসপোর্টে ভিসা লাগানোর কাজে সহযোগিতায় ব্যস্ত ছিল। এ সময় তাঁদের হাতে নাতে গ্রেফতার করা হয় এবং ঘটনাস্থল হতে একজন ভিকটিম ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রনি সহ অন্যান্য সূত্রে জানা যায় যে,রনি আন্তর্জাতিক কিডনি ও লিভার পাচারকারী দলের সদস্য। বাংলাদেশি এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ডালিম। ইন্ডিয়াতে অবস্থান করে শাহীন নামের একজন বাংলাদেশী রনি, আলমদের মাধ্যমে কিডনি ও লিভারের ডোনার সংগ্রহ করে তাদেরকে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে ডোনারদের তারা চার লক্ষ টাকা থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিয়ে থাকে। ইন্ডিয়ায় ডোনারদের সাথে রোগীদের রক্ত কিডনি ও লিভার কিডনি ও লিভার(Cross match) করিয়ে থাকেন শুধু কিডনী ও লিভার এর জন্য চক্রটি রোগীদের নিকট থেকে ১৫/২০ লাখ টাকা নেয়।
গ্রেফতারকৃত ডালিমের নেতৃত্বে উক্ত চক্রের সদস্যরা প্রথমে কিডনি ডোনেট সেন্টারসহ বিভিন্ন নামে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে থাকে। ঐ পেইজে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ডোনারদের নানাভাবে কিডনি ও লিভার ডোনেশনের ব্যাপারে প্রলোভন দেখানো হয়। ডোনার পাবার পর ঐ চক্রের সদস্যরা তাদের পাসপোর্ট ও ইন্ডিয়ান ভিসা লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। অতঃপর ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে তাদের রক্ত কিডনি ও লিভার পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্ট ঠিক থাকলে ঐ লোকদেরকে তারা ইন্ডিয়াতে পাচার করে।
ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত শাহীন ও ঐ দেশের হাসপাতালে ভিকটিমদের বিভিন্ন অঙ্গের পুনরায় পরীক্ষা করানোর পর তাদের কাছ থেকে কিডনি ও লিভার সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। এই চক্রটি এই পর্যন্ত প্রায় ৩০-৪০ জন লোককে প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে কিডনি ও লিভার দেবার জন্য ইন্ডিয়া পাচার করেছে। তারা আরও কয়েকজনকে একই উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ায় পাচারের প্রক্রিয়ায় চালান কালে একজন ভিকটিম ও ডকুমেন্ট সহ র্যাব তাদের হাতেনাতে আটক করে।
আন্তর্জাতিক কিডনী ও অন্যান্য পাচারকারী গ্রেফতারকৃত উক্ত আসামিরা উল্লিখিত ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী কারো অঙ্গহানী করা বা বিকলাঙ্গ করা গুরুতর অপরাধ জানা সত্ত্বেও উক্ত সঙ্ঘবদ্ধ পাচারকারী দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ নির্বিঘ্নে এইরূপ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল।
কিডনি লিভার প্রধানের পর কিডনি/ লিভারদাতা পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে গেলেও পাচারকারী দলটি তাদের ন্যূনতম সাহায্য ও সহযোগিতা করত না। কিডনি প্রধানের পর কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এমন নজির রয়েছে। উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮/১১ ধারায় নিয়মিত মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।