এম আর হাসান জেলা প্রতিনিধি খুলনাঃ
যশোরের বাঘারপাড়ায় গৃহহীনদের ঘর দেয়ার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শহীদ সামছুর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ দিয়ে কৌশলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় দরিদ্র লোকদের ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এবিষয়ে অর্থ গ্রহণকারী প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে গত ১৬ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ থানা অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছেন। শহীদ সামছুর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামীয় একটি আবেদন পত্রে দেখা গেছে, সরকার অনুমোদিত একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলে উল্লেখ রয়েছে। যার নিবন্ধন নম্বর যশোর-১২৬/৮৯।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় যশোরের অভয়নগর উপজেলার হিদিয়া এলাকায়। জানা গেছে, সংগঠনটি ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। কর্মীরা গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার নামে কৌশলে টাকা লুটে নিচ্ছেন। কর্মী হিসেবে উপজেলা সদরের পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও যুব মহিলা লীগের সদস্য গোলাপি খাতুন কাজ করছেন। স্থানীয়ভাবে গোলাপি খাতুন ওই সংগঠনটির আবেদন ফরমের মাধ্যমে গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কথা বলে অসহায় ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করে তোলেন। তার মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়ে ঘর নেওয়ার জন্য অসহায় পরিবারগুলো টাকা দিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। একই সাথে প্রতারণার শিকার হয়েছে ডজন খানেক পরিবার।
প্রতারণার শিকার উপজেলার পাকেরালী এলাকার জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারী ঘর দেওয়ার জন্য শহীদ সামছুর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের কর্মীরা আবেদন করতে বলেন। সেখানে আমি সহ আমার এলাকার অসহায় ৫ ব্যক্তি আবেদন করি। আবেদন খরচ বাবদ প্রথম দফায় ৩’শ করে ১৫’শ টাকা দিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় ৪’শ করে আরো ২ হাজার টাকা দিয়েছি। এসব টাকা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত পুকুরিয়াভিটা এলাকার শিউলি খাতুন নামে এক ব্যক্তি। তারা বলেছেন আগামী মাসের মধ্যে সবাইকে ঘর প্রদান করবেন। জাহিদুলের মতো এমন প্রতারিত হয়েছে উপজেলার পাকেরালী গ্রামের আরো ৪ ব্যক্তি। তারা হলেন লিটন হোসেন, শাহাদৎ মোল্যা, বদর মোল্যা ও ফরিদা বেগম। অন্যদিকে পুকুরিয়াভিটা এলাকার শিউলী খাতুন, আবু হানিফ ও রুমিচা বেগমও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এবিষয়ে প্রতারনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তথ্যানুযায়ী কথা হয় শিউলী খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাপি খাতুনের কাছে সব টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনিই গৃহহীনদের ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। আমিও ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। শহীদ সামছুর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদে কর্মরত গোলাপি খাতুনের মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করা মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে, পারলে দেখে যেতে পারেন।
শহীদ সামছুর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহমান জানান, বাঘারপাড়া উপজেলা সদরে গোলাপি খাতুন নামে এক ব্যক্তি আমাদের কাজ করেন। আমাদের প্যাডে আবেদন করলে ঢাকা থেকে গৃহহীনদের ঘর এনে দেয়া হয়। এসময় ঘর দেয়ার নামে টাকা নেয়ার কথা বলামাত্রই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাঘারপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দীন চিঠির বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ জানান, বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানা অফিসার ইনচার্জকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যশোর জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা জানিয়েছেন, সমাজসেবা থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রতারণা করার সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply