এম ইদ্রিছ আলী,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
জীবন সংগ্রামী অদম্য প্রতিবন্ধী মো. মোস্তফা (২৮)। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মধ্য বোয়ালখালী গ্রামে বসবাস করেন তিনি। পিতা নুর মোহাম্মদ গ্রামের একজন চায়ের দোকানী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। অভাবের কারণে খুব বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। কিশোর বয়সে হাল ধরেন সংসারের।
১২ বছর বয়সে তিনি দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেন স্থানীয় এক ইটভাটায়। পরে একটি টমটমে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। হেলপার হিসেবে কাজ করার চার বছরের মাথায় ২০১১ সালে একটি সড়ক দূর্ঘটনায় হারান ডান পা। স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার তার। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ধার-দেনার টাকা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুবেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খান মো. মোস্তফা। জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
পা হারানোর প্রতিবন্ধকতা তাকে হার মানাতে পারেনি। এক পা নিয়ে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে অদম্য শক্তিতে এগিয়ে চলছেন। বিভিন্ন ইটভাটা ও বাসা বাড়িতে কংক্রিট ভেঙে সামান্য আয় দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মধ্য বোয়ালখালী গ্রামে দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলার খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি আবদুল জলিল’র বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলে মো. মোস্তফার। তিনি সেখানে কংক্রিট ভাঙার কাজ করছিলেন। এসময় কথা হয় মো. মোস্তফার সাথে।
তিনি বলেন, অভাবের সংসার, দুবেলা ঠিকভাবে খেতে পারি না। এক পা দিয়ে চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। সরকার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছে। প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা ভাতা পাই। এছাড়া অন্য কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইনি। আমার থাকার কোন ঘর নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকি। উপজেলা প্রশাসনের কাছে একটি ঘরের আবেদন করেও কোন সাড়া পাইনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.হাসান বলেন, জীবন যুদ্ধে হার না মানা প্রতিবন্ধী মোস্তফার জন্য একটি ঘর প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তাকে একটি ঘর করে দেওয়ার অনুরোধ করছি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য ও মেরুং ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা মানিক বলেন, মোস্তফা এত কষ্টের মাঝেও কাজ করে চলে। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর ঘরের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করবো।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, আমার সাথে তিনি যোগাযোগ করলে সরেজমিনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।