মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মাঝেরফাঁড়ি ব্রীজ এলাকায় এক কাঠমেস্ত্রী এবার গাছের পরিত্যক্ত শিকড় দিয়ে বানালেন স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র। তাঁর নাম আজিজুর রহমান (৫৬)।
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) সরেজমিন গেলে দেখা যায়, পুরো একটি গাছের শেকড়কে কেটে তিনি এ মানচিত্রটি তৈরি করেছেন। এমনকি সাংবাদিকরা সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে আজিজুর রহমান তার শৈল্পিক হাতে শেকড় দিয়ে তৈরিকৃত মানচিত্র ইঞ্চি ফিতা দিয়ে সঠিকভাবে দৈর্ঘ্য-প্রস্থের আয়তনও মেফে দেখান। এসময় গাছের শেকড় দিয়ে তৈরিকৃত মানচিত্রটি বিক্রি করবেন কী না জানতে চাইলে তিনি মুখের উপর না করে দেন। আর মানচিত্রটি বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মানচিত্রটি আল্লাহর রহমত হিসেবে আমি পেয়েছি। তাই এটি আমার কাছেই থাকবে।
এসময় তিনি আরো বলেন, এ গাছের শেকড়ের মানচিত্রটি যদি কাউকে বিক্রি করি তাহলে সে এ মানচিত্রের সঠিক মর্যাদা না দিতেও পারে। তাই ১ কোটি টাকা হলেও আমি এ মানচিত্রটি বিক্রি করবো না। আজিজুর রহমান ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের এমইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নানান সমস্যার কারণে তিনি আর নির্বাচন করেননি। এরপর তিনি বেকার হয়ে বসে না থেকে চিন্তা করেন কী করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই গাছের শিকড় থেকে আসবাবপত্র বানানোর বিষয়টি মাথায় আসে তাঁর। এরপর নেমে পড়েন গাছের পরিত্যক্ত শিকড় সংগ্রহের কাজে। বলে রাখাই ভালো, আগে থেকেই কাঠের কাজ জানা ছিল তাঁর। এরপর শখের বশে শুরু করেছিলেন গাছের পরিত্যক্ত অংশ শেকড় দিয়ে আসবাবপত্র তৈরির কাজ। এ পর্যন্ত শেকড় দিয়ে তিনি চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, টি-টেবিল ও খাটসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করেছেন। প্রতিটি আসবাব বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আজিজুর বলেন, শৈল্পিক কাজ হওয়াতে প্রতিটি আসবাবপত্র বানাতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে তার। এছাড়াও সেগুন, গর্জন ও চাপালিশগাছের শিকড় থেকে আসবাবপত্র বানান আজিজুর রহমান। সেগুন ও গর্জনগাছের শিকড়ে বানানো আসবাবপত্রের দাম বেশি পড়ে। আর বয়সী গাছের শিকড়ে আসবাবপত্র ভালো হয়। একেকটি শিকড় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনেন তিনি। মাঝেমধ্যে তিনি নিজেই বেরিয়ে পড়েন শেকড় সংগ্রহের কাজে। তাই ইচ্ছে করলেও দাম তেমন একটা কম রাখতে পারেন না তিনি।
এই আসবাবপত্র বিক্রি করেই জোটে তাঁর রুটিরুজি। তার হাতে তৈরি একেকটি আসবাবপত্র যেন একেকটি শিল্পকর্ম। এরই মধ্যে এলাকার বাইরেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন তিঁনি। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) বিকালের দিকে আজিজুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি বসতঘরের আঙিনায় বসে আসবাবপত্র তৈরির কাজ করছেন তিনি। উঠানের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু গাছের শেকড়।আজিজুর রহমান একাই এসব আসবাবপত্র তৈরির কাজ করেন। তাঁর নেই কোনো কর্মচারী। শৈল্পিক এ আসবাবপত্র তৈরির ব্যাপারে আজিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেকড়গুলো সংগ্রহ করে সেগুলোর আকার-আকৃতি বুঝে কেটেছেঁটে চেহারা বদলে দিয়ে পরিণত করা হয় শৈল্পিক আসবাবে। একটি আসবাব বানাতে শুরুতে এসব শেকড়ের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া হয়। পরে বার্নিশ ও ফিনিশিং দিয়ে ব্যবহারোপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন করা হয়। আজিজুরের ভাষায়, অনেকেই তাঁর কাজ দেখতে আসেন। কিন্তু যাঁরা শৌখিন মানুষ, তাঁরা এ আসবাব কিনে নেন। বছরে পাঁচ থেকে ছয়টি আসবাব বিক্রি করে ৫-৬ লক্ষ টাকা আয় করেন আজিজুর রহমান। এদিকে, আজিজুর রহমানের কাছে সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন কী না জানতে চাইলে তিনি এখনো কোন ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়নি বলে জানান এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা তার শিল্পকর্ম পরিদর্শন করার পর অনেকে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গেলেও হয়নি কোন অগ্রগতি। নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে আজিজুর রহমান আরো বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে একটি কারখানা করার স্বপ্ন আছে তাঁর।