গোলাম রাব্বী
‘কলেজে পড়ে একটি মাইয়া… হায়! ধীরে… ধীরে… ধীরে , কোমরটা হেলিয়া দুলিয়া হা হাটে দেখ ধীরে ধীরে… ধীরে’।
দেশের ছাত্রসমাজকে অপমান করছে আমরা চুপ কেন? ছাত্রসমাজকে অপমান তো গোটা দেশ জাতি মানবতাকে অপমান। দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রাস্তার মুচি পর্যন্ত সকলকে অপমান। দেশ জাতি মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর।
আমি তো মনে করি, যে বা যারা দেশের ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের বাংলাদেশ থাকার বাংলা ভাষায় কথা বলার কোন অধিকার নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন দেশের ছাত্রসমাজ, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সবকটাতেই ছাত্রসমাজের অবদান, ত্যাগ সবার উপরে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সকল ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রসমাজ সবার আগে ঝাপিয়ে পরছে জাতির তরে।
ছাত্রসমাজই জাতির কর্ণধার, আজকের ছাত্রসমাজই আগামীর রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন সহ সকল কিছুর কর্ণধার। ছাত্রসমাজই দেশ জাতির সবকিছু।
তারা যদি অপমানিত হয় তাহলে গোটা জাতি অপমানিত, তারা যদি সম্মানিত হয় গোটা জাতি সম্মানিত।
এ কথা গুলো আমরা সবাই জানি তবুও বললাম। কেন বললাম ?
আমাদের দেশে একটি গান বাজে আশা করি সবাই শুনেছেন “কলেজে পড়ে একটি মাইয়া “এর পরের লাইনগুলো আমার
উচ্চারণ করতেও লজ্জা লাগে বিবেকে বাদে। যারা শুনেছেন শুনবেন এই গানের মধ্যে কলেজে অধ্যয়নরত একজন ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার নির্লজ্জ উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই উপস্থাপনার মাধ্যমে কি একজন নয় গোটা জাতির ছাত্রী, মা বোনদের কে কি অপমানিত করা হয় নি?
নারী সমাজ কে কলঙ্কিত করা হয়নি?
আমরাতো শুনি একজন মায়ের সাথে গোটা জাতির ইজ্জত সম্মান জড়িত, তাহলে আজ যারা ছাত্রী আগামীকাল তারাই কারো স্ত্রী, কারো মা কারো বোন। আজ যারা মা তারও এক সময়ের ছাত্রী, আজ যারা সরকার প্রশাসন জাতির দায়িত্বশীল তারও একসময়ের ছাত্রী। আজ যারা ছাত্রী তার কাল মা, মা অপমানিত তো সন্তান অপমানিত।
আমরাতো মায়ের হাসির জন্যই ভাষা থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন করেছি, ত্রিশ লক্ষ শহীদ তো মায়ের জন্যই হয়েছে বাংলা ভাষা তো মায়ের ভাষা যার জন্য আমরা ঢেলে দিয়েছি তাজা প্রাণ মায়ের মুখের হাসির জন্যই তো মুক্তিযোদ্ধ।
আর আজ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও যদি আমার মা বোন অপমানিত লাঞ্ছিত ভাষাগত ধর্ষিত হয় তাহলে কি দাম এই স্বাধীনতার। কি হবে এই স্বাধীনতা দিয়ে?
ছাত্রীকে/ছাত্রসমাজকে অপমান মানে গোটা জাতিকে অপমান,স্বাধীনতাকে অপমান,রাষ্ট্রকে অপমান, সরকারকে অপমান, স্বাধীনতা আন্দোলনকে অপমান, ভাষা আন্দোলনকে অপমান, শিক্ষা আন্দোলন কে অপমান বাঙালি জাতির ইতিহাসকে অপমান কলঙ্কিত করা ,এক কথায় গোটা মনবতা কে অপমান।
একটি স্বাধীন দেশে কিছু সংখ্যক মানুষ সামান্য বিনোদনের জন্য গোটা মনবতাকে অপমান করছে আমরা চুপ করে আছি! কেন?
কেন আমরা শুনেই যাচ্ছি কিছু বলছি না , আমরা তো রাজনৈতিক দিকে এগিয়ে আছেন, দলের অভাব নাই মার্কার অভাব নাই, আর দেশের স্বাধীনতার সৈনিকদেরকে অপমান করা হচ্ছে, স্বাধীনতা কে অপমান করা হচ্ছে, আমার আপনার মা বোন দের অপমান করা হচ্ছে, মানবতাকে অপমান করা হচ্ছে, আমরা চুপ করে আছি!
আমরা যদি চুপ করে এই অপমান সয্য করি তাহলে কি আমরা আমাদের পুর্ববর্তী বীরদের উত্তরসূরী হতে পারব?
মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দীদের মতো মহান ব্যাক্তিরা কি আমাদের ক্ষমা করবেন?
বর্তমান বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য যারা ১৭৫৭-১৯৭১ পর্যন্ত প্রাণ দিয়ে রক্ত দিয়ে ঘাম দিয়ে মেধা দিয়ে সংগ্রাম করে গিয়েছেন তারা কি ক্ষমা করবেন?
ত্রিশ লক্ষ শহীদরা কি কবর থেকে বলছে না এই অপমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে?
আসুন অপসংস্কৃতি রোধে সোচ্চার হই।