এস কে রাসেল
কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের সান্দিয়ারা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শত্রুতার জের ধরে ডাসা গ্রামের অসহায় কৃষকদের পাকা ধান জোড়পূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে রাজাপুর গ্রামের সুমনের লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ডাসা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন ভুট্টো বাদী হয়ে রাজাপুর গ্রামের নওয়াব আলীর ছেলে সুমনকে ১ নং আসামী করে তার সাথে জড়িত আরও ৩৫ জনের নামে কুমারখালী থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করবেন এবং এজাহারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, পান্টি সান্দিয়ারার ডাসা গ্রাম ও রাজাপুর গ্রামের সাথে দীর্ঘদিন যাবত আঞ্চলিক ভিত্তিক বিবাদ হয়ে আসছে। গত ৬ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে দুই এলাকার গ্রামবাসীর সাথে তুমুল সংঘর্ষ হয় এবং সংঘর্ষে বিল্লাল নামে একজন নিহত হয়। সংঘর্ষের পর থেকে দুই গ্রামের মানুষের মাঝে আগের তুলনায় বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।তারপর থেকে সুমন ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে আমজাদ হোসেন ভুট্টো ও তার এলাকার লোকজনকে হুমকি ও ভয়ভিতি প্রদর্শন করে আসছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ শুক্রবার আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকার সময় পূর্ব পরিকল্পনাভাবে কুমারখালী উপজেলার ১৯১ নং সান্দিয়ারা মৌজার ৪৯৭ ও ৫৩১ নং আর এস দাগে আমজাদ হোসেন ভুট্টোর রোপিত পাকা ধানের জমিতে, কাঁচি, দড়ি, লাঠি, ছোরা, শাবল, হাসুয়া, ঢাল, সরকী ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ীসহ আমজাদ হোসেনের জমিতে অনাধিকার প্রবেশ করে পাকা ধান কাটার জন্য আসামী সামিউর রহমান সুমন হুকুম দেয় তার গংদের।
হুকুমের সাথে সাথে আসামী জুয়েল, আজিজ, রওশন, শুকুর, আনছার, আব্দুল্লাহ, ওমর আলী, ফটিক, আকতার, রাজ্জাক, জামাল, মারুফ, রাজীব, উজ্জল, সোবাহান, ভাটু, আরমান, রবিউল, জাহিদ, রানা মোল্লা, মোক্তার, হুইট, বাবুল, আব্দুর রশিদগন পাকা ধান কাটতে থাকে। তারপর হেলাল উদ্দিন, আবুল হোসেন, আমিরুল, কামিরুল, মাসুম, আসাদুজ্জামান, ইয়াছিন, বাপ্পি হোসেন প্রায় ১৬০ মণ যার বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ধান কেটে ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যায় এবং প্রায় ২০ হাজার টাকা মূল্যের কাচা ধানের ক্ষতিসাধন করে যায়।
সংবাদ পেয়ে আমজাদ হোসেন এবং একই এলাকার মৃত ইসমাইল শেখের ছেলে গোলাম সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম, উম্মত আলীর ছেলে সুবত আলী, আকুল উদ্দিনের ছেলে জহুর আলী, গোলাম মোস্তফার ছেলে লাল্টু শেখ, মৃত আইনুদ্দিনের ছেলে জামিরুল, মৃত মাহাতাবের ছেলে নফর আলী সর্ব সাং ডাসা উপস্থিত হয়ে ধান কাটার কাজে বাধা দিলে সুমন গংরা আমজাদ হোসেন সহ উল্লিখিত ব্যক্তিদের মারপিট করে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। আহত আমজাদ হোসেনসহ তার সাথে থাকা ব্যাক্তিরাও চিকিৎসা নিয়ে থানায় গিয়ে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে সুমনসহ আরও ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে কুমারখালি থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ডাসা মহর আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল বারী বলেন, ডাসা গ্রামের কৃতি সন্তান খুরশেদুল আলম মামুন পান্টি ইউনিয়নের অসহায় মানুষের বিপদ আপদে সব সময় পাশে থাকে। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজ সেবক হিসেবে মহামারী করোনা ভাইরাসের দূর্যোগের মধ্যে ডাসা গ্রাম সহ সমগ্র পান্টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। পার্শ্ববর্তী গ্রাম রাজাপুরের সাথে দীর্ঘদিনের বিবাদ থাকা সত্তেও তিনি সেই গ্রামকে অবহেলা কররেন নাই। সেখানেই তিনি নিজ গ্রামের মতই খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ অর্থ অসহায়দের মাঝে দান করেছেন। ডাসা গ্রামের সন্তান হয়ে খুরশেদুল আলম মামুন সমগ্র পান্টি ইউনিয়নের মধ্যে এমন ভালো কাজ করার কারনে রাজাপুর গ্রামের সুমনসহ আরও অনেকের মাঝে হিংসার সৃষ্টি হয় এবং তারই জেরধরে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ডাসা গ্রামের মানুষদের ক্ষতিসাধন করার জন্য উঠে পরে লাগতে থাকে।
এরপর গত ৬ জুলাই তারিখে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজাপুরের সুমন গংরা দুগ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে এবং সেই সংঘর্ষে বিল্লাল নামের একজনের মৃত্যু হয়। তারপরেও থেমে নেই তাদের অত্যাচার। দুপক্ষের মামলায় প্রায় ২ শতাধিক দুই গ্রামের মানুষদের নামে থানায় মামলা হবার পর থেকে বর্তমানে পুরুষ শুন্য ডাসা গ্রাম পরিনত হয়েছে আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুমন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রাজাপুরে ডাসা গ্রামের অসহায় কৃষকদের ধান লোক মারফতে কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিসাধন হচ্ছে ডাসা গ্রামের অসহায় কৃষকদের। আর কেউ যদি তাদের কাজে বাধা দিতে যাচ্ছে তাহলে তাদের মারপিটসহ প্রাননাশের হুমকি প্রদান করছে সুমনের লোকজনেরা। ডাসা গ্রামের অধিকাংশ অসহায় পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয় ধান চাষ করে আর এই পাকা ধান যদি এভাবে জোরপূর্বকভাবে কেটে নিয়ে চলে যায় তাহলে না খেয়ে মরে যাবে ডাসা গ্রামের অসহায় কৃষকেরা। এলাকাবাসীর দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে অসহায় কৃষকদের পাকা ধান সুমন গংদের হাত থেকে রক্ষা করে অসহায় কৃষকরা যাতে নিজেদের ধান কেটে আনতে পারে সেই ব্যবস্থা করবেন।