1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে চুরি
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে চুরি

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০, ১১.৩৮ পিএম
  • ২৭২ বার পঠিত

শহিদুল ইসলাম সোহেল,স্টাফ রিপোর্টারঃ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে হোস্টেল বন্ধ থাকার সুযোগে কয়েক লাখ টাকার মালামাল ও একাডেমিক সার্টিফিকেটসহ জরুরি কাগজপত্র চুরি হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষের আবাসিক ভবনের ২০-২৫ গজ দূরে ছাত্রী হোস্টেল। অধ্যক্ষ ভবনের এত কাছে চুরি সংঘঠিত হলেও এ বিষয়ে টের পায়নি বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) বিকালে চুরির বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে হোস্টেলে আসেন ছাত্রীরা।

হোস্টেলে থাকা ছাত্রীরা জানান গত ১৭ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সে সময় ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই ছুটি থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে। এর আগে গত ১৬ মার্চ ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। ২৮ তারিখে কলেজ খোলার কথা থাকায় ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু হোস্টেলেই রেখে যান। কলেজ ক্যাম্পাসে হোস্টেল অবস্থিত হওয়ায় ছাত্রীদের জিনিসপত্রের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারপরও এমন চুরির ঘটনায় নির্বিকার কলেজ কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে এমন বড় চুরির ঘটনা ঘটলেও সেখানে গিয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে পাওয়া যায়নি। ছিলেননা কোনও শিক্ষক বা কর্মকর্তা।

শুক্রবার কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায়, হোস্টেলের চারপাশে পুরো এলাকায় জঙ্গল হয়ে রয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে কলেজের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ডরমেটরি, ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক হোস্টেল অবস্থিত হলেও, প্রতিষ্ঠানটিতে নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন মাত্র দুই জন। ছাত্রীদের থাকার জন্য সাতটি কক্ষ ও ডাইনিং রুমে জিনিসপত্রের তছনছ হয়ে আছে। সবগুলো ঘরেই ছাত্রীদের কাপড়, বইপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে আছে। হোস্টেলের ওয়াশরুমের কল, বালতিও নিয়ে গেছে চোরচক্র। বাদ যায়নি ছাত্রীদের কাপড় চোপড়, নগদ টাকা, দুটি ল্যাপটপ, একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, প্রায় ৩০টির মতো টেবিল ফ্যান, চার্জার ফ্যান, রুমের লাইট, থালাবাসন, বেশ কয়েকটি ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, কয়েকটি ইলেকট্রনিক স্টোভ, গ্যাসের চুলা। শুধু তাই নয়, লাগেজ থেকে একাডেমিক সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাজপত্রও নিয়ে গেছে চোরেরা। হোস্টেলের ছাদ থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিছানার চাদর দিয়ে বানানো রশি ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়।

কলেজের অ্যাপারেল ডিপার্টমেন্টের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও হোস্টেলে আবাসিকে থাকা ছাত্রী সুরাইয়া সুলতানা বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ কলেজ বন্ধ ও হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ আসার পর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাপড় নিয়ে আমরা সবাই বাড়ি গিয়েছিলাম। ১০ দিন পরই কলেজ খোলা থাকায় আমরা ল্যাপটপ-কম্পিউটার, নগদ টাকাসহ কোনও কিছুই নিয়ে যাইনি। বৃহস্পতিবার বিকালে হোস্টেল সুপার ফোন করে চুরির ঘটনা জানান। পরে আজ (শুক্রবার) সকালে আমরা হোস্টেলে এসে সবকিছু তছনছ অবস্থায় দেখতে পাই। এর আগেও এখানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে এখানে থাকলেও আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুব নাজুক। আগের চুরির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’

হোস্টেলের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী দিপা সমাদ্দার বলেন, ‘আমাদের হোস্টেলে ছাত্রীদের খাওয়া খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। আমরা মেসের মতো মিল সিস্টেমে খেয়ে থাকি। হোস্টেলের কোনও লাইট বা অন্য কিছু নষ্ট হলে ছাত্রীদের নিজ খরচে মেরামত করতে হয়। এজন্য আমরা সবাই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখি। রুমে একটি বাক্সে ছাত্রীদের খাবার ও অন্যান্য কেনাকাটার জন্য নগদ ৪০ হাজার টাকা ছিল। এছাড়া প্রতিটি ছাত্রীরই কম-বেশি ব্যক্তিগত টাকাও ছিল। বন্ধ হওয়ার কদিন পরই কলেজ খোলা থাকার কথা থাকায় কেউ সেই টাকা নেয়নি। অনেকের স্বর্ণের গহনাও ছিল। সেগুলোও চুরি হয়েছে।’

ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আম্বিয়া আক্তার আখি বলেন, ‘দ্বিতল বিশিষ্ট এই হোস্টেলে ৭টি রুমে ২৭ জন ছাত্রী থাকতাম। হোস্টেলে প্রচুর গরম থাকায় প্রত্যেক ছাত্রীরই আলাদা টেবিল ফ্যান-চার্জার ফ্যান ছিল। সেগুলো সবই চুরি হয়েছে। আমাদের সার্টিফিকেটও চুরি হয়েছে। এর আগেও এখানে চুরি হয়েছে। তখন আমাদের কলেজ প্রশাসনকে জানানোর পর তারা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।’

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমি বলেন, ‘এখানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণির শিক্ষার্থী রয়েছে। এইসব ছাত্রীর একাডেমিক সব কাগজপত্রই চুরি হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেকেরই কমবেশি অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

হোস্টেলের নাইটগার্ডের দায়িত্বে থাকা জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে কলেজের নিজস্ব সাবস্টেশন নষ্ট থাকায় প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। যেহেতু ছাত্রী হোস্টেল আর ছাত্রীরাও নেই, তাই আমরা শুধুমাত্র বাইরে থেকে টর্চ দিয়েই দেখাশোনা করতাম। আর এই হোস্টেলটিও মূল ক্যাম্পাসের বাইরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ রোডের পাশে। এতে নিরাপত্তাকর্মী কম থাকায় নজরদারি করাও সম্ভব হয় না। বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয়রা হোস্টেলের পেছনের সীমানা দেয়াল টপকে এক যুবককে কিছু মালামাল নিতে দেখে। পরে আমি হোস্টেল সুপারকে সেটি জানাই। তিনি এসে দেখেন হোস্টেলের মূল ফটকের সামনের তালা ভাঙা। এরপর ভেতরে গিয়ে প্রতিটি রুমের তালা ভাঙাসহ সবকিছু তছনছ দেখা যায়।’

হোস্টেল সুপার তোহফা আক্তার বলেন, ‘আমি মূলত কলেজের ফোরম্যানের দায়িত্বে রয়েছি। পাশাপাশি ছাত্রী হোস্টেলের সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। চুরির বিষয়টি জানার পরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছে। অধ্যক্ষ কলেজের বাইরে থাকায় কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ মো. বকতিয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে অসুস্থতা জানিয়ে কথা বলতে চাননি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি না আসা পর্যন্ত হোস্টেলে প্রবেশ করা যাবে না। পরে একপর্যায়ে তিনি ভেতরে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের অনুমতি দেন। এ সময় তার কাছে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম খোলা থাকা এবং এমন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট থানায় এই বিষয়ে কথা হয়েছে। শনিবার আমি কলেজে যাওয়ার পর ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কী কী ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত সাত দিন আগেও হোস্টেল সুপার হোস্টেলের ভেতরে প্রবেশ করে সবকিছু ঠিকঠাক দেখেছেন। এই সাত দিনের মধ্যেই সম্ভবত কোনও এক সময় এমন চুরি ঘটনা ঘটেছে।’

কলেজের ভেতরে ছাত্র হোস্টেল আর বাইরে ছাত্রী হোস্টেল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র কয়েকমাস আগে এখানে যোগ দিয়েছি। আসার পরই করোনা শুরু হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে আমি যোগ দেওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। যেহেতু আমাদের নিরাপত্তকর্মীও মাত্র দুইজন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দেয়।’

প্রতিষ্ঠানে তার অবর্তমানে কে দায়িত্ব পালন করেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি না থাকলে হোস্টেল সুপার তোহফা আক্তার বিষয়টি দেখেন। আমি না থাকলে তিনিই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।’ একজন ফোরম্যান কীভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন, জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, ‘বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে জানানোর পরই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও লিখিত অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেননি।অভিযোগ  পেলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews