তৌহিদ আহাম্মেদ রেজাঃ
ট্রেনের ছাদে ডাকাতি ও হত্যায় জড়িত মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ট্রেনের পেশাদার ছিনতাইকারী। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা ছিনতাই করতো। আবার সুযোগ বুঝে সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতিও করত তারা।
রোববার দুপুরে র্যাব-১৪ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা এলাকার আশারাফুল ইসলাম স্বাধীন, বাঘমারা এলাকার মাকসুদুল হক রিশাদ, মো. হাসান, রুবেল মিয়া ও মোহাম্মদ। এদের মধ্যে শনিবার রাত ১ টার দিকে প্রথমে স্বাধীনকে গ্রেফতারের পর চেইন অপারেশন চালিয়ে ঘটনায় জড়িতদের অন্যদের গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১২ টি মোবাইল সেট উদ্ধারের পাশাপাশি তাদের দেখানো জায়গা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৪’র অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত চক্রটি নিয়মিতভাবে ট্রেনে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ট্রেনে উঠতো এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত।
তিনি আরো বলেন, তারা ছােট ছােট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করতো। এই ছােট ছােট উপ-গ্রুপগুলাে কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুষ্ঠিত মােবাইল ও অন্যান্য লুষ্ঠিত মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করতো আর বাকিরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত।
ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে জানিয়ে উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চারজন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সঙ্গে যােগ দেয় মােহাম্মদ ও তার একজন সহযােগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মােবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নিহত সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সাগর ও নাহিদ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে। তখন ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ঢোকার আগেই সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন থেকে তারা নেমে যায়।
র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক বলেন, ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মােহাম্মদসহ অজ্ঞাত কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল। আর টার্গেট শনাক্ত করার দায়িত্বে ছিল হাসান। এরপর লুষ্ঠিত মােবাইল ও অন্যান্য মালামাল কম দামে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করত রুবেল। পাশাপাশি চক্রটির পৃষ্ঠপােষকও বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রটির মূল হোতা। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানা ও কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। সে দুই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে ছিল বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী মিতালী বাজার এলাকার ওয়াহিদের ছেলে নাহিদ মিয়া ও জামালপুর শহরের বাগেড়হাটা বটতলা এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে সাগরের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন বাদী হয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নগরীর কেওয়াটখালি এলাকা থেকে শিমুল মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।