কাজী মোতাহার হোসেন স্টাফ রিপোটার
বিরলে পুনঃবার বিয়ে করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আলোচিত হয়েছেন এক প্রবীণ দম্পত্তি। সম্পর্কের স্তর শেষ হবার কারণে অর্থাৎ পাঁচপিড়ি পার করার কারণে এ আয়োজন বলে জানিয়েছেন, বিয়ের আয়োজক ও স্থানীয়রা।
তাই তো গত ২১ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) ঘোটা করে সনাতন (হিন্দু) ধর্মের রীতি অনুযায়ী সম্পন্ন হল এ বিয়ের আয়োজন। বিয়েতে, বিয়ের গীত, গায়ে হলুদ, পুরহিত, মন্ডপতলা, বৌ-ভাত, বাসর ঘর, বাদ্য-বাজনা, সাজ সজ্জা, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও ভুঁড়ি ভোজের কোনটারই কমতি ছিলোনা বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে প্রবীণ এ বর কনেকে এক নজর দেখার জন্য এলাকার উৎসুক জনতার ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মত। প্রবীন দম্পত্তির পুনঃ বিয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, বিরল উপজেলার ০৮নং ধর্মপুর ইউপি’র দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামে। আলোচিত দম্পত্তির ১০৭ বছর বয়সী প্রবীণ এ বরের নাম বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা এবং ১০২ বছর বয়সী কনের নাম পঞ্চবালা দেবশর্ম্মা।
প্রবীন বর বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা জানান, ওই গ্রামের স্বর্গীয় পিতা ভেলশু নাথ দেবশর্ম্মা ও স্বর্গীয় মাতা ভুলে বালা দেবশর্ম্মার পুত্র তিনি এবং কনে পঞ্চ বালা দেবশর্ম্মাও একই এলাকার স্বর্গীয় বিদ্যা মন্ডল দেবশর্ম্মা ও স্বর্গীয় শুভ বালা দেবশর্ম্মার কন্যা। গত প্রায় ৯০ বছর আগে তাদের সামাজিক ভাবে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। এরপর সংসার জীবনে বিয়ের প্রায় তিন বছরের মাথায় কোল আলো করে এক কন্যা সন্তান আসে। কন্যার নাম রাখা হয় ঝিলকো বালা দেব শর্ম্মা। কন্যা ঝিলকো বড় হলে তাকে রীতিমত পাত্রস্ত করা হয়। বিয়ে দেয়ার কয়েক বছর পর কন্যার একটি আদরী বালা নামের কন্যা সন্তান অর্থাৎ আমাদেও নাতনীর জন্ম হয়। নাতনী আদরী বালাও বড় হলে তাকেও বিয়ে দেয়া হয়। নাতনীর বিয়ের পর তার কোল জুড়ে রেখা বালার জন্ম হয়।
ফলে আমরা সর্ম্পকে বড় বাবা ও বড় মা হই। এর পর রেখা বালা বড় হলে তাকেও বিয়ে দেয়া হয়। কয়েক বছর পর তাঁরও একটি রুমি বালা নামের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে আমাদের নাতনীর নাতনী। রুমি আমাদেরকে সর্ম্পকে কি বলে ডাকবে। তাঁর সাথে আমাদের সর্ম্পকের স্তর শেষ হয়ে গেছে। তাঁরপরেও সৃষ্টি কর্তার অশেষ কৃপায় বেঁচে আছি বলে আমরা সর্ম্পকের পঞ্চমস্তর বা পাঁচ পীড়িতে অবস্থান করছি। আমরা দু’টি মানুষ থেকে বর্তমানে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫২ জনে দাড়িয়েছে। এলাকাবাসী অনেকে জানান, দম্পত্তি যদি জীবিত থাকে এবং সম্পর্কের পাঁচ পীড়িতে অবস্থান করে তাহলে সনতান (হিন্দু) ধর্মের রীতি অনুযায়ী পুনঃবার বিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। তাই ওই প্রবীণ দম্পত্তির পুনঃবার বিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্ম্মপুর ইউপি শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রতন চন্দ্র সরকার জানান, আমিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গন্য-মান্য ব্যাক্তিবর্গ এ আলোচিত বিয়ের আমন্ত্রতিত অতিথি ছিলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি সকলের প্রাণচাঞ্চল্যতা লক্ষ্য করেছি। সবাই একটি অন্য রকম আনন্দ করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রবীণ দম্পত্তির পুনঃ বিয়েটা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। ধর্ম্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার প্রবীণ দম্পত্তির পুনঃবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর বৈদ্যনাথ কন্যা সন্তান ছাড়া পুত্র সন্তান নাই। কন্যার কন্যা এ ভাবে তিনি পাঁচপীড়িতে অবস্থান করছে। আসলেই এই বিয়েটা একটি ইতহাস হয়ে থাকলো। বিরলের সর্ব মহলের জনগন মনে করেন।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..