আব্দুল্লাহ আল মামুন
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, জমি সংক্রান্ত যেকোনো সেবা পেতে তাদেরকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে, এবং সরকারি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে অর্থ দাবি করছেন।
ভুক্তভোগী মোঃ সারজন মোল্যা, যিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, জানান, তিনি ও তার স্ত্রী মোসাঃ পারুল বেগম শরীফা আকারের নামে ২৭ শতক জমি ক্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন। জমিটি(ভিপি) থেকে অবমুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনও পেয়েছেন। সারজন মোল্যা বলেন, “আমার জমি ভিপি লিস্ট থেকে অবমুক্তির জন্য আমি রায় পেয়েছি, তবে তারপরেও আমাকে জমির কাজ সম্পন্ন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, লোহাগড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) আব্দুস সালাম জমির কাজের জন্য ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সারজন মোল্যা যখন এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন নায়েব সালাম তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। সারজন মোল্যা জানান, “টাকা না দেওয়ার পর থেকে নায়েব সালাম আমাকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমার জমির কাজ আটকে রেখেছেন।”
এমন অভিযোগ কেবল সারজন মোল্লার নয়; আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও একই অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, ভূমি অফিসে যেকোনো জমি সংক্রান্ত কাজ করতে গেলে কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে ঘুষের দাবিতে হয়রানি করেন। যদি কেউ ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তার কাজ স্থগিত করে রাখা হয় এবং নানা জটিলতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। এক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ, নিয়ম মেনে কাজ করাতে চাই, কিন্তু ঘুষ না দিলে কোনো কাজ এগোয় না।”
স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই দুর্নীতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, “সরকারি কর্মকর্তাদের এই দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে আমরা আমাদের ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।”
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিঠুন মৈত্র বলেন, “অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আরেক ভুক্তভোগী খালেক মাস্টারের ছেলের বউ জানান, “আমার জমি অন্য লোকের নামে নামজারি করে দিয়েছে ঘুষের বিনিময়ে। এর ফলে এলাকায় খুনোখুনির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাই আমি এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে কেজিও সাহেবের সাথে নায়েব সালামের অপরাধের ব্যাপারে কথা বলেছি।”
সারজন মোল্যা তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি এই ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয়ে নড়াইল জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয়রা আশাবাদী যে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুর্নীতির অবসান ঘটাবে এবং জনগণের ন্যায্য সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করবে।