মমিন আজাদ।। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নতুন ২৮৯ শ্রমিক যোগদানে পুর্বের অস্থায়ী ভিক্তিতে কর্মরত দক্ষ ৫ শত শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে। এতে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা থমকে যাওয়ার আশংকার পাশাপাশি বিপাকে পরেছেন ছাটাইকৃতরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলকে সচল রাখতে ব্রিটিশরা সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানা স্থাপন করে। রেলের প্রয়োজনে সব ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরী করতে এ কারখানায় ২৪ টি উপকারখানায় কয়েক হাজার মেশিন বসিয়ে প্রায় ১০ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। ব্রিটিশদের পতন ও পরে স্বাধীন বাংলাদেশে মিলে দেড়শ বছরের দির্ঘ সময়ে ক্রমান্বয়ে অবসরের পর কমতে থাকে শ্রমিক।
এতে উৎপাদন ব্যাহত হলে ২০১৪ সালে ‘কাজ আছে, মজুরি আছে’ অস্থায়ী ভিক্তিতে ২ শত শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। এতেও সংকুলান না হওয়ায় ২০২২ সালে আবারও একই নিয়মে ৩ শত শ্রমিক নেয়া হয়। আর স্থায়ী ৬২১ জন ও অস্থায়ী ৫০০ জন শ্রমিক ঈদুল ফিতরের আগে ১০০ টি কোচ মেরামত করা হয়।
তারপরেও ২৪টি উপকারখানা বা সোপের মধ্যে কেবল ঢালাই ঘর, পেইন্ট, সিএন ডাব্লু, ওয়াগন, সিএইচআর, কামার শালা, লোকোমেশিন, ইয়াড, মিল রাইট, বয়লার, পিএম, টুল রুম সোপে উৎপাদন চলছে। বাকি ১২ টি সোপ জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। সোপগুলোতে কয়েক শত দামি মেশিন পত্র জনবলের অভাবে অকেজো হয়েছে।
জানা যায়, কারখানার লোক মেশিন সোপের ৩৫ টির মধ্যে ১২ টি মেশিন সচল। বাকিগুলো নস্ট।
কারিগরের অভাবে দির্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি মুল্যের মেশিনগুলো অচল হয়েছে বলে মোফাজ্জল হোসেন নামে ওই সোপের মিস্তিরি। তিনি আরও জানান, এই সোপে স্থায়ী শ্রমিক মাত্র ৮ জন। সামান্য এ জনবল দিয়ে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় কতৃপক্ষ ৯ জন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেয়। আর এতেই কাজের গতি বাড়ে সোপে।
সাজ্জাদ হোসেন নামে পেইন্ট সোপের মিস্তিরি জানান, বিশাল এ সোপে ৪১ জন নিয়মিত ও অস্থায়ী ৫২ জন মিলে ৯৩ জন কাজ করত। ৮ বছরে অস্থায়ী শ্রমিকরা দক্ষ হওয়ায় কতৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুতই কাজ উত্তলন হত। এখন দক্ষদের ছাটাই করায় নতুনদের গড়ে তুলতে সময় ব্যায় হবে। এতে উৎপাদন কমবে। যেখানে ৩০ টি আউট টার্ন হত। এখন ৮ থেকে ১০ টি কোচ হবে।
সিএইচআর সোপের আ: সালাম নামের এক ছাটাইকৃত অস্থায়ী শ্রমিক জানায়, ২০১৪ সালে এ কারখানায় অস্থায়ী ভিক্তিতে যোগ দেই। নিজ দক্ষতায় কারিগর হয়েছিলাম। আজ (২৯ এপ্রিল) কারখানায় গিয়ে শুনি চাকরি নেই। চাকরি বিধিনুযায়ী নতুন নিয়োগ পাওয়ার বয়সও নেই। এখন কোথায় যাব? কি করব? আর বাইরে কাজ করে কিভাবে ৫ সদস্যর সংসারে ব্যায় মেটাব? আবুল হোসেন নামে শ্রমিক বলেন, ‘প্রায় দেড় বছরের প্রশিক্ষণে দক্ষতার সাথে করেছি।
এখন চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হল। আবার কখন উর্ধ্বত্বন কতৃপক্ষ ডাকবে? আর বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলে-মেয়েদের ভরোন-পোষন কিভাবে যোগাড় করব? ভেবে পাচ্ছি না। আর চাকরি হারিয়ে সকল ছাটাই শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে চড়ম দুশ্চিন্তায় নিপতিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে কারখানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে ৪ বছর শিক্ষনবিশকাল থাকবে। এ প্রশিক্ষনকালীন সময়ে রেলওয়ে কারখানায় কাজের গতি তেমন বাড়বে না। তাই দেশের রেলব্যবস্থাপনা সঠিক রাখতে অবশ্যই অস্থায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে হবে। না হলে লোকসানে ধুঁকতে থাকা রেল সহজে দাড়াতে পারবেনা।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মো: সাদেকুর রহমান বলেন, ঠিক ছাটাই নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুনরায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দক্ষদের অস্থায়ী ভিক্তিতে নিতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। নতুনদের সময় লাগবে।