সুবীর দাস, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ঃঃ
নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নওগাঁর ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে জেলায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ১৭০টি ইটভাটা আছে। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ ও বি,এস,টি,আই অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নাই। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি সিন্ডিকেট পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে নওগাঁর বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। এতে নওগাঁ জেলাসহ সারা দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে মনে করছেন সচেনত কৃষক মহল।
সদর উপজেলার তিলকপুর/বর্ষাইল ইউনিয়নের কৃষক নাহিদ হোসেন ও আক্কাছ আলী বলেন, মূলত ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব্য সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে আগের মতো আবাদ হয়ে থাকে। আর আমাদের মধ্যে কোনো কৃষকের ফসলি জমির পরিমান বেশি হলে এক পক্ষ এসে বারবার বুঝায় এতো ফসলি জমি দিয়ে কি হবে আপনারা একটি পুকুর করেন এতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে মোটা অংকের কিছু টাকা পাবেন ও পুকুর থেকে প্রতি বছরে দুই সিজনে মাছ বাজারে বিক্রি করে অধিক টাকায় লাভবান হবেন। তাই তাদের বারবার বুঝানোর জন্য একদিন সিদ্ধান্ত নেই এ বছরে আমি তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটবো। কিন্তু এসব জমিতে তারা মাটি কাটা শ্রমিক না লাগিয়ে এক্স-ভেটর ভেক্যু মেশিন দিয়ে ট্রাক্টর দ্বারা বিভিন্ন ইট ভাটায় ট্রাক্টর প্রতি ৩০০/৪০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।
মহাদেবপুর উপজেলার শিকরামপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, তার জমি একটু উঁচু হওয়ায় সবজির আবাদ ভালো হতো। তবে ধানের আবাদ করার জন্য আড়াইবিঘা জমির মাটি ইটভাটাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করায় জমির কী ধরনের ক্ষতি হবে তা তিনি জানেন না।
নওগাঁ সদর উপজেলার মেসার্স এবিসি বিক্সস’র মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদী ও পরিত্যাক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। নদীর মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর মোঃ শামছুল ওয়াদুদ হোসেন জানান, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। নওগাঁ জেলায় প্রচুর পরিমান সরকারি/বেসরকরি পুকুর আছে। এছাড়াও রয়েছে এ জেলায় নদী/নালা খাল/বিল এতে করে আমাদের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে যাবে। তাই এসব ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হতে থাকলে নওগাঁ জেলায় আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো ঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন, ইট ভাটাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি না নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানো হবে। একটা সময় হয়ত এ সমস্যা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..