পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার
কাজী মোতাহার হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদক: | ১৫ জুন ২০২১ | ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার
FacebookTwitterShare
সরকার পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইলেকট্রিক ট্রেন চলু করার মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করা নিয়ে রেল বিভাগে একটি পর্যালোচনা টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বৈদ্যুতিক ট্রেন সর্বোচ্চ ওজন বহনে সক্ষম এবং পরিবেশবান্ধব। পাশাপাশি ওই ট্রেনগুলোর পরিবহন ব্যয়ও কম।
Surjodoy.com
মাত্র ৪ ইউনিট বিদ্যুতে বৈদ্যুতিক ট্রেন এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে। আর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ ১০ টাকা হলে এক কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ৪০ টাকা। অথচ ডিজেল চালিত ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ হাজার টাকারও বেশি পড়ে। রেলওয়ে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন প্রবর্তন করা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য একটি মাইলফলক হবে। ওই ট্রেন চালু হলে ভ্রমণ সময় ও অপারেশনাল ব্যয় কমার পাশাপাশি যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। তাছাড়া শহরগুলোতে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
The Daily surjodoy
রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা-ভাবনা থাকলেও তা কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর মূল কারণ ছিল দেশে বিদ্যুতের সঙ্কট। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিগত ১২ বছরের চেষ্টায় এখন বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। পারমাণবিক কেন্দ্রসহ আরো বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
The Daily surjodoy
ওসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে দেশের চাহিদা পূরণ করেও সাশ্রয় হবে। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা মাথায় রেখেই রেলসহ আর কোন্ কোন্ খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায় ওই চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। তাছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
The Daily surjodoy
দুই ইউনিটের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ওসব বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে একটি মাস্টার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এক সময় দেশে চাহিদার থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হবে। বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা হিসেবে সকল রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
The Daily surjodoy
সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। ওই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমে রেলওয়ে যোগাযোগও চালু করার কাজ চলছে। ঢাকা থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৬৯ কিলোমিটার। লুপ সাইডিং (লাইন বদলের জন্য) এবং ডবল লাইনসহ মোট ট্র্যাক হবে ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার। নির্মাণাধীন প্রকল্পে নতুনভাবে বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হবে। পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক দিয়েই শুরু হবে বৈদ্যুতিক ট্রেন।
The Daily surjodoy
পর্যায়ক্রমে দেশের সকল রেলপথই ইলেকট্রিক ট্রেন প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া চলমান খুলনা-মোংলা ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা হবে। দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের অধিগ্রহণ প্রায় ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর বাকি আছে ৩৫ শতাংশ। ওই পথেও বৈদ্যুতিক সিস্টেম নতুন করে সংযোজন করা হবে।
The Daily surjodoy
সূত্র আরো জানায়, বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর জন্য পুরনো রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রামে সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন (ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশন) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
The Daily surjodoy
ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুরের মধ্যে চলমান ডবল লাইন প্রকল্পটি ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন ব্যবহারের আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে রেল যোগাযোগ আরো কার্যকর হবে। নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যতম প্রধান এবং কেন্দ্রীয় শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। আর চট্টগ্রাামের প্রধান সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে।
The Daily surjodoy
বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ জনসংখ্যা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে সহজেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। যে কারণে ওই অঞ্চল দিয়ে চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন। প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন নির্মাণের প্রযুক্তিগত, আর্থিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত উপযোগিতা যাচাই,
The Daily surjodoy
ওভারহেড ক্যাটেনারি, সাবস্টেশন এবং উপযুক্ত প্রযুক্তির চাহিদা নির্ধারণ এবং ভবিষ্যত কৌশল সম্পর্কে সুপারিশ দেয়া হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের জন্য বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা ও প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা এবং ভবিষ্যত কৌশল নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশের মতো একই প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভারতসহ অন্যান্য দেশে গৃহীত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যত কৌশল সম্পর্কে সুপারিশ করা হবে।
The Daily surjodoy
ট্র্যাফিক পূর্বাভাস, লেভেল ক্রসিং গেট এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত প্রকৌশল নক্সা প্রণয়ন করে বিস্তারিত নক্সার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে প্রাক্কলন ব্যয়। আর সমীক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ৪ এবং স্থানীয় ১৩ জন পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে।
The Daily surjodoy
এদিকে বৈদ্যুতিক রেল প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের জানান, কম খরচ এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্কের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করা হবে। এখন থেকে আর পুরনো পদ্ধতির কোন রেললাইন নির্মাণ করা হবে না। নতুন লাইন নির্মাণ করলে তা বৈদ্যুতিক ট্রেনের জন্যই করা হবে।
The Daily surjodoy
শিগগিরই পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার মহাপরিকল্পনা নেয়া হবে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করতে পারলে রেলপথ লাভজনক হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও পদ্মা সেতু রেলসংযোগে বৈদ্যুতিক ট্রেন চলবে। নতুন রেলপথ নির্মাণ করলেই বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রভিশন রাখা হবে। এক সময় দেশে বিদ্যুতের অভাব ছিল, বার বার লোডশেডিং হতো।
The Daily surjodoy
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ এখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরং দেশে চাহিদার থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সামনে বিদ্যুতের উৎপাদন আরো বাড়বে। ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ রেলপথে ব্যবহার করা যাবে। সেজন্যই নতুন রেলপথ যেগুলো নির্মিত হচ্ছে সেখানে ইলেকট্রিক সিস্টেম চালু থাকবে। পুরনো রেলপথের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।