ডেস্ক: ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মে বাঙালির অবদানের কথা তুলে ধরেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র আয়শা ফারুকি জানিয়েছেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। এর আগে গত ২২শে জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির এই চেষ্টা সময়মতই টের পেয়েছে ভারত। গত সপ্তাহে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ঢাকায় ছুটে আসেন। ভারতের শাসক দল বিজেপির মুসলিম-বিরোধী অবস্থানকে ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিষয়ে পাকিস্তানের আগ্রহের বিষয়টি। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু, নাগরিকত্ব আইন ও রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ওআইসি ও সৌদি আরবের কাছ থেকে ইতিবাচক উত্তর পায়নি পাকিস্তানও। এমতাবস্থায় পাকিস্তানি একজন কূটনীতিক দ্য ডিপ্লোম্যাটকে জানিয়েছেন, চীন ও তুরস্ক কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে। দেশটি আশা করছে এই তালিকায় বাংলাদেশও যুক্ত হবে। চীন কাশ্মীরের বিষয়ে আগ্রহী কারণ দেশটির সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বৈরতা রয়েছে। একইসঙ্গে দেশটি নিজেকে একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
বাংলাদেশে রয়েছে চীনের বড় বিনিয়োগ। তাই কাশ্মীর নিয়ে চীন-পাকিস্তান-তুরস্কের অবস্থানকে সমর্থন দিতে আগ্রহী হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে চীনের। নতুন অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য আরো ৬.৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের বিষয়ে কথা হচ্ছে। একইসঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের একজন কূটনীতিক বলেন, তুরস্ক নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্লকে যোগ দিলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখনকার থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাবে, যা আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে থেকে পাওয়া যাবে না। তুরস্ক কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যেখানে আরব রাষ্ট্রগুলো উলটো এর বিরোধিতা করছে। পাশাপাশি, ভারত ও ইসরাইলের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলো প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে তুরস্ক ব্লকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পাকিস্তানের যে চেষ্টা তার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কারণ রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিষ্পেষণের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এরপর দীর্ঘ সময় দুই দেশের মধ্যে বিরাজ করছে বৈরি সম্পর্ক। এখন চীন ও তুরস্ক হয়ত পাকিস্তানকে আবার বাংলাদেশের সংগে বসার সুযোগ করে দেবে। এটি ইসলামাবাদকে শুধু ঢাকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে সাহায্য করবে না বরঞ্চ পূর্বে করা অসংখ্য ভুল শুধরে নেয়ার সুযোগ করে দেবে।
বর্তমানে স্বার্থের কারণে দুই দেশের মধ্যে যদি মিত্রতা স্থাপিত হয় তাহলে তা পাকিস্তানের জন্য লাভজনক হবে। তবে পাকিস্তান এখন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।
(দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত গণমাধ্যমটির প্রতিনিধি কুনওয়ার খুলদুনে শহিদের কলামের সংক্ষেপিত অনুবাদ)