নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় দেশ। এমন ঘটনাকে কিসের সঙ্গে তুলনা দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না নেটিজেনরা। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন অনেকে, ক্ষোভ প্রকাশ করার ভাষাও যেন খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার,বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী,বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর। ছাড় পায়নি ওই নারী। তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে।
নির্যাতনের ঘটনার ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫)। মামলার প্রধান আসামি বাদল এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত র্যাব-১১-এর নিরবচ্ছিন্ন সাঁড়াশি অভিযানে বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এবং দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক আসামিকে রবিবার বিকেল ৪টায় এবং অপর আসামিকে রাত ১১টায় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তারা হলেন- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আব্দুর রহিম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার রহিম, বাদল, কালামসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে গৃহবধূর বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূ অনৈতিক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এনে নির্যাতন চালান। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন তাঁরা। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন; কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন যুবক তাঁর পোশাক কেড়ে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এ সময় তিনি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু এক যুবক কয়েকবার তাঁর মুখমণ্ডলে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেন। তাঁর শরীরে একটা লাঠি দিয়ে আঘাতও করতে থাকেন। তাঁর নগ্ন ছবি ধারণের চেষ্টা চালান তাঁরা। একজন হাত উঁচিয়ে তাঁকে উৎসাহ দেন। আরেকজন তাঁর শরীরের অবশিষ্ট পোশাক টেনে নেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবেন বলে চিৎকার করেন একজন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’
ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ভূঁইয়া।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ জানায়, বিষয়টি নজরে এলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পরে গতকাল সন্ধ্যায় নির্যাতিত গৃহবধূকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
Leave a Reply