নিরেন দাস, বিশেষ প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে নিজে না থেকে ঘরগুলোর নামে লোন নিয়ে ঘর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেক সামর্থ্যবান যাদের ঘর প্রয়োজন না থাকলেও ঘর বরাদ্দ নিয়েছিলেন৷
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর আবাসন আশ্রয়ণ-প্রকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফেরশা আবাসন প্রকল্পের ৫০ টি ঘর পাকাকরণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
গত ২০০৪ সালে মামুদপুর উইনিয়নে ফেরশা আবাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে বরাদ্দপ্রাপ্ত এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ৫০ টি আধাপাকা ও টিনশেড বাড়ি। ওই বছরই ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুস্থদের মাঝে স্থানীয় প্রশাসন ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়।
অভিযোগে জানা যায়, আশ্রয়ণের ৫০টি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন উপকার ভোগীরা। এদের মধ্যে সুবিধাভোগী ৫০ বছর উর্দ্ধো নারী মনোয়ারা বেগম বলেন, সচ্ছল ও নিজস্ব জমি-বসতবাড়ি থাকায় বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণের বাড়িটিতে কখনও থাকেননি। বরাদ্দের দিন থেকে প্রায় ১২ টি ঘর পরিত্যক্ত ছিলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও কয়েকটি বাড়ির অবস্থা প্রায় একই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা অভিযোগ তুলে বলেন, বড় পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণের বাড়িতে আমরা কষ্ট করে বসবাস করছি। অথচ বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে কেউ কেউ একদিনের জন্যও বাড়ির তালা খুলেননি। ফলে দীর্ঘদিন বাড়িগুলো পরিত্যক্ত থাকায় নষ্ট হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, কেউ কেউ নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া বাসা অন্যকে দিয়েছে। আবার ওই ঘরের দলিলমূলে লোন নিয়ে লাপ্তা হয়েছে। আশ্রয়ণের বাড়িতে যারা থাকেন না, তাদের একটি তালিকা আমাদের প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
সে তালিকা অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে বাড়িতে না থাকার অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন, লেজাম, আছের আলী , লসির উদ্দন, ফয়জার, নূরুল, আব্দুল, মোছলেম, মামুন, ফারাজ, রহিম উদ্দিন, ময়েজ, ছানোয়ার, ইউনুস আলী, লাভলু, আঃ সামাদ, আঃ রাজ্জাক, আমিনুর, মুনছুর, আজিজার, আঃ রুউফ, কামাল, টিপু। প্রায় ১৯ বছর পূর্বে মির্জাপুর আবাসন প্রকল্পের সমবায় সমিতির মাধ্যমে লোন নিয়ে পালিয়ে যায়৷ অদ্যবধি ওইসব সুবিধাভোগী বসত ভিটায় ফিরে না আসায় ছিন্নমূল মানুষ উপকার ভুগীরা বসবাস করেন৷ বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবাসন প্রকল্পের নতুন ঘরগুলো সম্পন্ন হওয়াই এখন দখল নিতে হিরিক পড়েছে৷
জহরুল নামে এক ব্যক্তি বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন৷ এ ব্যাপারে স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারগুলো সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নে এখনও কিছু ভূমিহীন পরিবার বাড়ি না পেয়ে বিভিন্ন জনের জমিতে ঘর তুলে ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন।
ওই আশ্রয়ণের সভাপতি আঃ সামাদ বলেন, যারা আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে বসবাস না করে তালা দিয়ে রেখেছেন। সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও অসচ্ছলদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকা অথবা যারা উপকার ভোগী ঘর পেয়েও থাকেন না তারা সচ্ছল কেউ যদি এমনটি করে থাকে তবে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।