প্রধানমন্ত্রীর ঘর প্রদানে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ
মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরার কলারোয়া মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না-প্রধানমন্ত্রীর এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জেলার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে দরিদ্রদের ঘর প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের মধ্যদিয়ে ঘর প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঘর প্রদান করা হয়েছে।
জয়নগর ইউনিয়নের খোরদো বাটরা এলাকায় ১৭টি ঘর প্রদানে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য স্থানীয় বজলু মেম্বরের মাধ্যমে বিপুল পরিমান এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কর্তৃক বিচার প্রার্থী এক গৃহবধূকে বিয়ে করে যেমন আলোচনায় এসেছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর ফ্রি ঘর প্রদান করতে বজলু মেম্বরের আর্থিক সুবিধা গ্রহন ও নানান অনিয়ম এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
প্রতিটি ঘর ১লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যের।কলারোয়া উপজেলার খোরদো বাটরা গ্রামের তবিবর মোড়লের ছেলে মোখলেছুর রহমান জানান, আমি দরিদ্র চাষী। যখন ঘর আসে তখন স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ড মেম্বর বজলুর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে ২০ হাজার টাকা দিতে বলেন। আমি আমার বোনের একটা গরু বিক্রি করে বজলু মেম্বরের হাতে এককালিন ২০ হাজার টাকা তুলে দিই।
ফলে ঘর প্রদানের তালিকায় আমার নাম আসে। তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে আরও ৩জনের নিকট থেকে ঘর প্রদানের জন্য নগদ টাকা গ্রহণ করেছে কিন্তু আমি তাদের নাম বলবো না। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
তিনি দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান।কলারোয়ার গাজনা গ্রামের মৃত নেছার আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয়ার কথা শুনে আমি একটি ঘরের জন্য বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার মেঝো ভাই আরিজুল জানায়, ঘর পেতে হলে টাকা লাগবে।
তখন সে আমাকে বলে ২০ হাজার টাকা দিতে। আমি ১৯ হাজার টাকা যোগাড় করে তার হাতে তুলে দেই। পরে তালিকায় আমার নাম আসে। তবে আমার মেঝো ভাই টাকা নিয়ে কার কাছে দিয়েছিল তা আমি বলতে পারবো না। বর্তমানে আমি একটি ঘর পেয়ে উক্ত ঘরেই বসবাস করছি।উপজেলার মানিকনগর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা অসুস্থ্য জোহরা বেগম জানান, দরিদ্ররা ঘর পাবে এমন খবর শুনে আমি একটি ঘর পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকি।
তখন আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে ও মানিকনগরের সাংবাদিক আব্দুর রহমানের কাছে বলি। তারা বলে আমি একটি ঘর পাবো। এরপর তালিকায় নাম আসে। কিন্তু বজলু মেম্বর ফোন করে আমার কাছে বলে তুমি খুব গরিব মানুষ। তাই কম করে তুমি ১৫ হাজার টাকা দিবে।
আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে আমাকে ধমকাতে থাকে। তার সঙ্গে আরও এক মেন্বর টাকা চায়। সব শেষে ঘরের মেঝেতে শুধু ইট দিয়ে প্লাস্টার করবে জেনে আমি বালি দিতে বলি। তখন আমার কাছ থেকে জোর জুলুম করে বজলু মেম্বর ১৫শ’ টাকা নেয়। বালি এনে আমার ঘরে কম করে দিয়ে আরও অনেক ঘরে সেই বালি দিয়েছে বলে জানান জোহরা খাতুন।
জয়নগর ইউনিয়নের খোরদো বাটরা গ্রামের মৃত গোলাপ রহমান গাজীর ছেলে আব্দুল ওহাব জানান, আমি ভূমিহীন দিনমজুর। জায়গাজমি না থাকায় যখন ঘর আসলো তখন একটি ঘর পাওয়ার চেষ্টা করি। আমার ভাগ্নে হুমায়ুনের মাধ্যমে স্থানীয় বজলু মেম্বরের সাথে কথা বলে ভাগ্নের মাধ্যমে বজলু মেম্বরের হাতে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিই। তখন তালিকায় আমার নাম আসে। যদিও মেম্বরের দাবী ছিল ২০ হাজার টাকা।
আমার কাছে টাকা না থাকায় অন্যের নিকট থেকে ধার করে এনে এই টাকা মেম্বরকে দিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম এতে যদি হয় ভাল, না হলে কিছুই করার নেই।তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দরিদ্র কৃষক দিনমজুন ভূমিহীনরা ঘর পাওয়ার কথা থাকলেও এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি ঘর দেওয়ার নামে আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের
আওতায় আনার দাবী জানান।এদিকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঘরের তালিকা করার অভিযোগ অস্বীকার করে জয়নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য জয়নগর গ্রামের মৃত আবুল কাসেম সরদারের ছেলে বজলুর রহমান জানান, তালিকা প্রণয়নে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। কারো কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করা হয়নি। সামনে নির্বাচন তাই এলাকার কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, তালিকা প্রণয়নে ইউপি সদস্যের কোন হাত নেই। চেয়ারম্যান, পিআইও, নায়েব ও ইউএনওরা একত্রিত হয়ে তালিকা তৈরি করেন। সবশেষে তিনি বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই আমাকে প্রতিপক্ষরা ঘায়েল করতে এধরণের অভিযোগ তুলেছে।
তারা এর আগে আমার নামে মিথ্যা মামলাও দিয়েছে।এবিষয়ে কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান জানান, উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে আমিও শুনেছি, তবে ঘর দেয়ার ক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়ন, লে আউট দেওয়া সহ সকল কার্যক্রম তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী জেরিন কান্তা ও এসিল্যান্ড নিজেই করতেন।
যা কলারোয়ার অনেকেই জানেন। আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে আমার কোন কিছুই জানা নেই। তবে এধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে তা তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করেন তিনি।সার্বিক বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান,
উপজেলার খোরদো বাটরা এলাকায় সরকারি ১৭টি ঘর প্রদানে অনিয়মের বিষয়ে আমি অবহিত হয়েছি। একজন ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি জেনে তদন্ত অব্যাহত আছে।