রংপুর ব্যুরো:
কলেজ জাতীয়করণ ও ভূয়া শিক্ষক নিবন্ধন (এনটিআরসিএ) সনদধারীদের নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) রংপুর-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের বিরুদ্ধে। ঐ প্রতিষ্ঠানে জামায়াত শিবির পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি এখন সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত (০৬ জুন) বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ সরকারি কলেজর অধ্যক্ষ মুহা. মাজেদ আলী খান এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির দপ্তরে প্রেরণ করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা আসে। এর অংশ হিসেবে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ সময় এমপি ডিউক চৌধুরী জামায়াত শিবির পরিবারের সদস্যদের নিয়োগের প্রলোভন ও শিক্ষক নিবন্ধন (এনটিআরসিএ) সনদধারীদের জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্তির নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এমপি ডিউক তার দাবিকৃত টাকা না পেলে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলে। ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ উপায় না পেয়ে শিক্ষক কর্মচারীসহ চাঁদা তুলে দেড় কোটি টাকা প্রদান করে। এই চাঁদায় কলেজের সুইপার বাসুমতিকেও ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এসব টাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুনীল চন্দ্র সরকার নিজ নামীয় হিসাব আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করে। পরে এমপি ডিউক তার নিজ গাড়িতে করে নিয়ে যায়। তৎকালীন সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এতোগুলো টাকা একেবারে উত্তোলনের কারণ জানতে চায়। সহকারী অধ্যাপক তখন নিজের ইটভাটার লাইসেন্স প্রদান করে উক্ত টাকা উত্তোলন করে দেয়। তবে এমপি ডিউকের চাহিদা মতো টাকা দিতে গিয়ে ঐ কলেজের অনেক শিক্ষক জমি জমা বিক্রি করে সর্বস্ব হারিয়েছে।
এমপি ডিউক উক্ত প্রতিষ্ঠানে জামায়াত শিবির পরিবারের সদস্য মো. রেজওয়ানুল হককে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে, ২০ লাখ টাকায় শামীমা আফরিনকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়। এছাড়াও ২০ লাখ টাকায় মো. শামীম আল মামুনকে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছে। যার এনটিআরসিএ সনদ ভূয়া থাকা সত্ত্বেও জাতীয়করণে পদ সৃজন হয়। ফলে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
এদিকে জাসদ নেতা নিরঞ্জন কুমার রায়কে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়। যার এনটিআরসিএ সনদ ভূয়া থাকায় আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মো. ফরিদুল ইসলাম নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করলেও তাকে প্রথম স্থান দেখিয়ে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। এছাড়াও শিবির নেতা মো. শাকিরুর রহমানকে এনটিআরসিএ সনদ বিহীন ২০ লাখ টাকার বিনিময় ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়।
অন্যদিকে মোছা. রাশেদা খাতুন ব্রাক এনজিওতে সবধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আসলেও এমপির সাথে আঁতাত করে ১০ লাখ টাকায় বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পায়। মো. আলিনুর হোসেন ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভূয়া এনটিআরসিএ সনদের মাধ্যমে রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়।
বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. মাজেদ আলী খান জানান, “আমি যে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে করেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য। একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৃথিবীর কোন শিক্ষক বা অধ্যক্ষ মিথ্যে অভিযোগ করতে পারে না। যা আবেদনে আছে সম্পূর্ণ সত্য, প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের জন্য স্থানীয় এমপির ডিওলেটার লাগে, উনি দুইটি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদ্বন্দ্বি বানিয়েছেন। পরে দুই কলেজের মধ্যে দর কষাকষি করে দেড় কোটি টাকা নির্ধারণ হয়, যে বেশি টাকা দিবে উনি সেই কলেজের পক্ষে ডিওলেটার দিবে। পরে আমার যারা শিক্ষক কর্মচারী ওনার পক্ষে সকলে চাঁদা তুলে ওনাকে দেড় কোটি টাকা দিয়েছি। তাঁর এই দুর্নীতির কথা তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জের সকল মানুষ জানে। এটি এখন ওপেন সিক্রেট। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমপি সীমাহীন দুর্নীতি করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এগুলোর সব সত্যতা বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে পুলিশের ডিবি ও ডিজিএফআই আমার কাছে তথ্যের জন্য এসেছিলেন। ওনারা মাঠে তদন্ত করছেন।
এসব অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়। ঐ কলেজের অধ্যক্ষ এবং তারাগঞ্জের একটি ছেলে হোয়াটস অ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কোন একটি পক্ষ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।
তবে একটু পরে এমপি ডিউক প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল দিয়ে বলেন, “বিশ্বনাথ সরকার বিটু সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকজনদের দিয়ে এসব মিথ্যে অভিযোগ দেওয়াচ্ছে। যখনেই নির্বাচন আসে তখনেই সে আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করে”।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমি তাঁর বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করব? অভিযোগ কে করেছে? প্রিন্সিপাল করেছে, তাহলে সেখানে আমার নাম আসবে কেন? মূলতঃ বিগত সময়ে সে আমার সাথে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছে। দেশনেত্রী যদি সামনে আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করব। এটাতে উনি আমাকে ভয় পাচ্ছে। তবে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবে আমি তার পক্ষে কাজ করব, তাহলে উনি ভয় পাচ্ছেন কেন?