বিশেষ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসনে আন্নুঃ
পুলিশ বাহিনীর গর্ব ও সর্বসাধারণের বন্ধু ডিআইজি হাবিবুর রহমান হাবিব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তিনি এই সংগঠনের মাধ্যমেই হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আলো ছড়ানো এবং ঢাকার সাভারের আমিনবাজার ও বি-বাড়িয়ায় হিজড়াদের জন্য গড়ে তোলেন তিনটি বিউটি পার্লার। এসব পার্লারগুলো নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে হিজড়াদের। দেশের বিভিন্ন এলাকার হিজড়াদের একসময় মূল পেশা ছিলো (প্রতারণা,চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড) তাদেরকে পুলিশের এই কর্মকর্তা বাইরে এনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। পাশাপাশি বেদে সম্প্রদায়ের জন্য বুটিকসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিক্ষালয়।
বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জে একটি স্কুলে বেদেদের সন্তানরা লেখা পড়া শিখছে। বেদেপল্লীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এই সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি হচ্ছে মিউজিয়াম। আর এসব মানবিক ও জনস্বার্থে কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন সাবেক ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি (প্রশাসন-ডিসিপ্লিন) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, এনজিও এগিয়ে আসছে।
এ প্রসঙ্গে বরাবরই ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, “সমাজ উন্নয়নের জন্য পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে”। জনস্বার্থে তাদের নানাভাবে কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে হবে। সচেতনতার অভাবে সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় তারা বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন,এইজন্য তাদেরকে আলোর পথ দেখাতে হবে।
সত্য বলতে বাধা নেই এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেদেপল্লী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিক, কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্যাশন হাউস ও বিউটি পার্লারসহ নানা ধরণের কর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষালয়। সারা দেশেই এর কার্যক্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমজন আহম্মেদ, উত্তরণ ফাউন্ডেশনর।
তিনি আরও বলেন, দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। সংবিধানে সকলের জন্য সে অধিকার রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে কাজ করে চলেছেন। জানা গেছে, ঢাকার অদূরে সাভারের বংশী নদীর তীরে পোড়াবাড়ি, অমরপুর, কাঞ্চনপুর ও বাড্ডা গ্রামে প্রায় দেড়শ বছর আগে বসতি গড়ে তোলেন বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা। তথ্যমতে ওই বেদে পল্লীতে তাদের সদস্য এখন প্রায় ১৫ হাজারের মতো।
আর এই ব্যতিক্রমী ও মানবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মানুষগুলোর জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। অনেকেরই অভিমত-কিভাবে একটি জনপদ, একটি সম্প্রদায়কে পাল্টে দেয়া যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতো জনসেবায় অন্যরাও যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সমাজের মানুষের অভাব-অনটন হানাহানি থাকবে না বলে মনে করেন অনেকেই। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডিআইজি হাবিবুর রহমান সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে পিছিয়েপড়া বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিগত ‘উত্তরণ কম্পিউটার সেন্টার’ ও ‘উত্তরণ শিক্ষালয়’ নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমাড়ভোগ খড়িয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে।
বিশেষ করে কম্পিউটার সম্পর্কে শিক্ষা আর উত্তরণ শিক্ষালয় থেকে শিশু শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। যারা পাঠদান করান তাঁরাও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া বেদে সম্প্রদায়ের সন্তান। যেসব শিশু স্কুলে যায় তাদেরকে প্রতিদিনকার স্কুলের পড়া ও বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই শিক্ষালয় থেকেই, ২০২০ইং বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা জানান, এই শিক্ষালয়ে প্রতিদিন দুই শিফটিতে ৮০ জন করে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কথা হয় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২টির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ শাকিল আহমেদ এর সঙ্গে, তিনি দাবি করেন আমিও বেদে সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। তিনি এখন লৌহজং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আরও ৩ জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়য়া বেদে সম্প্রদায়ের সদস্য এই শিক্ষালয়ে পাঠদান করায়। তিনি বলেন, এই পাঠদানের জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশন আমাদেরকে কিছু সম্মানিও দিচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় উত্তরণ বিউটি পার্লার ১-এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সাভারের হেমায়েতপুরে মাওলানা শপিং কমপ্লেক্স হিজড়াদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য চালু করা হয়েছে ‘উত্তরণ বিউটি পার্লার-২। এ বিউটি পার্লারের পরিচালনায় আছেন ৫জন হিজড়া সদস্য। এটি পরিচালিত হচ্ছে হিজড়া সোহাগী’র মাধ্যমে। এ ছাড়া বি-বাড়িয়া পৌর এলাকার টেংকেরপারের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরণ বিউটি পার্লার-৩। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পার্লারটি যাত্রা শুরু হয়, আর এই পার্লারটি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া উদ্বোধন করেন, সঙ্গে ছিলেন, হিজড়াদের বিউটি পার্লারের স্বপ্নদ্রষ্টা পুলিশের ডিআইজি
হাবিবুর রহমান।
এই পার্লারটিতে নারীদের ফেসিয়াল, চুল কাটা, পার্টি সাজ, বউ সাজ ইত্যাদির সকল ব্যবস্থা আছে বলে হিজড়া সদস্যরা জানান।বিশেষ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য ধারাবাহিকভাবে একাধিকবার পেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পুরুস্কার পান ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এর আগে তিনবার তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে এই পদক পড়িয়ে দেন।
সততার সাথে সেবা, সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পুলিশ সপ্তাহে এই পদক দেওয়া হয় যা (বিপিএম এবং পিপিএম নামে পরিচিত) প্রথমটি বাংলাদেশ পুলিশ পদক এবং পরেরটি রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক। ডিআইজি হাবিবুর রহমান পুলিশের অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত আছেন। তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও অনন্য সাধারণ পেশা দায়িত্বের সাথে প্রতিপালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের প্রশাসন, পার্সোনেল ম্যানেজম্যান্ট, ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স শাখার কার্যক্রম তদারকি করেন।
বাংলাদেশের প্রায় দুই লক্ষাধিক পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তিনি ই- ফাইলিং, পুলিশ সদস্যদের যাবতীয় তথ্যাবলি পিআইএমএসের মাধ্যমে সংরক্ষণসহ পুলিশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সুত্রঃ অপরাধ বিচিত্রাসহ একাধিক পত্রিকায় ডিআইজি হাবিবুর রহমানের মানবসেবা- সততা ও সাহসীকতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্র দিঘলীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চন্দ্র দিঘলীয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এ এসপি) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তারপর অতিরিক্ত ডিআইজি’র দায়িত্ব পালন করেন, তিনি পুলিশের একজন নীতিবান ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় সাংবাদিক ও জনসাধারণের আগের মত সময় দিতে পারেন না। বর্তমানে করোনায় মানুষের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। সারা দেশেই এর কার্যক্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমজন আহম্মেদ, উত্তরণ ফাউন্ডেশনর।