ফেনী জেলা প্রতিনিধি : ফেনীতে কীট না থাকায় ৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ। গত ১৯ জুন থেকে জেলায় নতুন করে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। ফেনীর সংগ্রহীত নমুনা নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হলেও কীট সংকটের কারণে তা বন্ধ রয়েছে। এতে করে পূর্বের সংগৃহীত ১২৭৩ জনের নমুনাও আটকে আছে পরীক্ষাগারে।
জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণকক্ষের সমন্বয়ক ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, গত ২০ জুন পর্যন্ত ফেনীতে ৬৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১৪ জন। সুস্থ হয়েছে ১৩৫ জন। জেলায় এ পর্যন্ত ৪৫৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৩২৭১ জনের ফলাফল পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তিনি আরও জানান, জেলায় বর্তমান করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ সীমার মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নমুনা সংগ্রহের আবেদন। গত ১৯ জুন থেকে কীট সংকটের কারণে ফেনীতে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
এদিকে করোনার উপসর্গ থাকায় শহরের বাসিন্দা সৈয়দ মোহাম্মদ কাওসার তার স্ত্রী নিয়ে গত ২০ জুন জেনারেল হাসপাতালে যায়। তবে করোনার কীট না থাকায় পরীক্ষার জন্য স্ত্রীর নমুনা দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান। এদিকে স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২২ জুন স্ত্রীকে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করান। পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
অপরদিকে ফেনী শহরের ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান করোনা পরীক্ষার জন্য গত ১২ জুন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নমুনা দেন। কিন্তু ২৪ জুন বুধবার পর্যন্ত ফলাফল জানতে না পেরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তার মতো অনেকে নমুনা দিয়ে ফল পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষাধীন রয়েছেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ৩০ শয্যার করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৪৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও করোনা উপসর্গে আক্রান্ত আরও ৭৫ জন রোগী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
নতুন নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে আরএমও মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা বলেন, আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত এ হাসপাতালে করোনা নমুনা সংগ্রহের আবেদন বুকিং রয়েছে। যারা নতুন নমুনা দিতে আসছেন কীট না থাকায় তাদেরকে ফেরৎ দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার বিষয়ে ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের সংকট রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরও তীব্র সংকট রয়েছে। হাসপাতালে ৫৫ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ৫০ জন। এদের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা মতে শারীরিক জটিলতার কারণে করোনা রোগী চিকিৎসা থেকে বিরত রয়েছেন ৮জন চিকিৎসক। অপরদিকে হাসপতালে ১৪৬টি নার্স’র পদ থাকলেও নতুন পুরোনো মিলিয়ে কর্মরত রয়েছে ৮২জন। সারাদেশে নতুন ৫ হাজার নিয়োগকৃত নার্সের মধ্যে ফেনীতে ৬৫ জন পদায়নের কথা থাকলেও নতুন নার্স এসেছে মাত্র ৫ জন। এছাড়াও আরও ৩১ জন নার্স জেনারেল হাসপাতালে বদলী করা হলেও যোগ দিয়েছে ১৫জন। এদের সবাই ৮২ জনের অন্তর্ভূক্ত।
ডা. ইকবাল জানান, হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে ৪ জন ডাক্তার পর্যায়ক্রমে ৭দিন করে নিয়মিত বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। এছাড়া আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রতি শিফটে একজন ডাক্তার, ২জন নার্স ও ৩জন ওয়ার্ডবয় ও আয়া কাজ করছে। করোনা কালীর সময়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩ জন করে চিকিৎসক তিন শিফটে রোগী দেখছেন। তাদের প্রতিটি টিমে ৬জন নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়া ৬জন রয়েছেন। এদের মধ্যে কোনো টিমে কেউ যদি করোনা পজিটিভ হয় তবে পুরো টিম আইসোলেশনে চলে যেতে হচ্ছে।
কীট সংকটের বিষয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, নতুন কীট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। কীট পেতে অফিসিয়াল ও নন অফিসিয়াল ভাবে উর্ধ্বতনদের সাথে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন শীঘ্রই কীটের ব্যবস্থা হবে।
নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের ল্যাব ইনচার্জ ডা. ফজলে এলাহী জানান, ল্যাব চালু হওয়ার পর প্রতিদিন ফেনী থেকে আসা ১৮০ থেকে ১৯০টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল করে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন কীট না থাকায় তাদেরকে নমুনা পাঠাতে বারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ল্যাবে ফেনীর ১২৭৯ জনের নমুনা পড়ে আছে। কীট পাওয়া গেলে পুনরায় কার্যক্রম চালু করা হবে।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন ১৮ জুন থেকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরদিকে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ফেনী পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞা পৌরসভা এবং দাগনভূঞা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হলেও কাগজে কলমেই তা সীমাবদ্ধ রয়েছে।