অনলাইন ডেস্কঃ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনা মহামারির এই চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়েও দেশব্যাপী চলমান আকণ্ঠ দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি আরও চরম আকার ধারণ করেছে। সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল এবং আরিফ-সাবরিনার জেকেজি পরীক্ষা না করেই মানুষকে বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে হাজার হাজার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে তাতে এক দিকে সংক্রমণের হতাশাব্যঞ্জক ঝুঁকিতে পড়েছে গোটা জাতি, অন্যদিকে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি যাত্রীরা পড়েছে সংকটে। বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার হয়ে যাওয়া কিছু যাত্রীর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা নিষিদ্ধ করেছে। এ পর্যন্ত সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে সব দেশই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বের বহু দেশ প্রধানত নেতৃত্ব ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল বাংলাদেশ সেটা পারেনি। টেস্টের মান প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে। শুধু ইতালি নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, করোনা ভাইরাস টেস্টের মান যদি উন্নত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেকায়দায় পড়তে পারে বাংলাদেশ। সাহেদকে গ্রেফতার নিয়েও নাটক হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশেষে প্রতারক সাহেদ গ্রেফতার হয়েছে। তার গ্রেফতার নিয়েও নাটক হয়েছে বলে মনে হয়। ১৬ জুলাই প্রথম আলোর সংবাদ অনুযায়ী, “গুঞ্জন ছিল তিনি কলকাতায়। র্যাব বলেছে ভারতে পালানোর সময় সাতক্ষীরার সীমান্ত থেকে ধরা পড়েন। তবে সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সাহেদ করিম কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। সোমবার সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে তাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় ছিলেন। একদিন পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়”। আসলে সাহেদের অপরাধের মাত্রা এত মারাত্মক এবং এত বেশি আলোচিত হয়েছে যে সাহেদের গ্রেফতার একটা গণপ্রত্যাশায় পরিণত হয়ে পড়ে। তাই অবশেষে এই গ্রেফতার নাটকের আয়োজন বলে অনেকে মনে করেন। তিনি বলেন, একদিনে করোনা ভাইরাস শনাক্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এশিয়ায় প্রথম ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। আর মৃত্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর চার মাসের মাথায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি। সীমিত পরীক্ষা সত্ত্বেও দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বলছে, ঝুঁকি এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সংক্রমণ রোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামাজিক দূরত্বের ধারণাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের মতো এমন জাতীয় দুর্যোগকালেও সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু লোক অনিয়ম-দুর্নীতির নিষ্ঠুর মহোৎসবে মেতে উঠেছে দাবি করে মহাসচিব বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালে বৈধ লাইসেন্স নাই এটা জেনেও তাদের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। রিজেন্ট ও জিকেজির কর্মকাণ্ড মনিটরিং না করেই এদের প্রতারণামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, করোনা মহামারির এ সংকটকালে পুরো জাতি যখন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন সরকারি হিসাব মতেই দৈনিক প্রায় ৪০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন তখন স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল। স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতাহীন দুর্নীতির দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।