রফিকুল ইসলাম বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
Facebook Twitter share
মায়ের বান্ধবীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে এক বছর ধরে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমেনা খাতুন (১১) নামে এক শিশু। তার সারা শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকার দাগ। প্লায়ার্স দিয়ে তার মাথার চুল টেনে ছেঁড়া হয়েছে। আমেনা বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
Surjodoy.com
যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নূর ইসলাম ও আকলিমা খাতুনের মেয়ে আমেনা। আমেনার যখন দুই বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যান। নানা মারা গেছেন জন্মের আগেই। আমেনার যখন সাত বছর বয়স, তখন নানি জোহরা খাতুন আকলিমাকে আবার বিয়ে দিয়ে দেন। ভিক্ষা করে নানি জোহরা খাতুন লালন পালন করছিলেন আমেনাকে।
The Daily surjodoy
গত বছর করোনার আগে আকলিমা খাতুনের ছোটবেলার বান্ধবী শ্যামলী বৈরাগী তাকে অনুরোধ করেন আমেনাকে তার কাছে দেওয়ার জন্য। শ্যামলীর দুটি বাচ্চা আছে। ঢাকার বাসায় থেকে আমেনা তাদের দেখাশোনা করবে। আমেনার থাকা খাওয়া ও তাকে মানুষ করার দায়িত্ব তার। সরল বিশ্বাসে বান্ধবীর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন আকলিমা।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমেনা বলে, শ্যামলী আন্টি আমাকে ঢাকার মহাখালীতে সাততলা সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে যান। সেখানে শ্যামলী আন্টি, তার স্বামী বাদল সিকদার ও আন্টির শাশুড়ি লিলি থাকেন। আন্টির শাশুড়ি সরকারি হাসপাতালের নার্স। ওই বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর দুই মাস ভালো ছিলাম। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন। বাড়ির কাজের একটু এদিক ওদিক হলেই বেধড়ক মারপিট করতেন শ্যামলী ও বাদল।
The Daily surjodoy
আমেনা জানায়, তাকে দিয়ে বাসার সব ধরনের কাজ করানো হতো। এর আগে সে কোথাও কাজ করেনি বা শেখেনি। রুটি বানানো দিয়ে তার কাজ শুরু। রুটির পরিমাণ কম হলে তাকে মারপিট করা হতো। হাত থেকে পিরিচ পড়ে গেলে মারধর করা হতো। সারা শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। হাত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাত মচকে দিয়েছে, প্ল্যায়ার্স দিয়ে মাথার চুল টেনে টেনে উঠিয়ে দিয়েছে। গলায় এবং মাথায় আঘাত করেছে। রুটি বানানো বেলন দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দিয়েছে। শ্যামলীর স্বামী আমেনার পায়ের ওপরে দাঁড়িয়ে যন্ত্রণা দিয়েছে। শ্যামলী তার বুকের ওপর দাঁড়িয়েছে। মুখে টেপ লাগিয়ে তাকে হত্যাচেষ্টাও করা হয়েছে। তবে নির্যাতনের কিছুই জানতে পারেনি আমেনার মা ও নানি।
আমেনার মা আকলিমা খাতুন জানান, ফোন করলেই বলতো আমেনা ভালো আছে। ফোনে লাউড দিয়ে কথা বলাতো। তারা কিছুই জানতে পারেননি।
The Daily surjodoy
তিনি আরও জানান, গত বছর করোনার আগে তার ছোট বেলার বান্ধবী শ্যামলী বৈরাগী তাকে অনুরোধ করেন আমেনাকে তার সঙ্গে দেওয়ার জন্য। শ্যামলীর দুটি বাচ্চা আছে। ঢাকার বাসায় থেকে আমেনা তাদের দেখাশোনা করবে। আমেনার থাকা খাওয়া ও তাকে মানুষ করার দায়িত্ব তার। সরল বিশ্বাসে বান্ধবীর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন।
The Daily surjodoy
আমেনার নানি জোহরা খাতুন জানান, এক মাস আগে তিনি আমেনাকে দেখতে ঢাকায় যান। কিন্তু বাদল তাকে বাড়িতে নেয়নি। তার চাচা তাকে মিরপুরের বাসায় নিয়ে যায়। তাকে জানানো হয় শ্যামলী ও বাদল বরিশালে বেড়াতে গেছে। আমেনাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে।
যশোরে ফিরে জোহরা খাতুন ফোন করে আমেনার জন্য কান্নাকাটি করেন। একপর্যায়ে এক সপ্তাহ আগে আমেনাকে নিয়ে আসার জন্য তার মা আকলিমাকে ফোন করেন শ্যামলী। এরপর গত ২৩ মে তার নানি ঢাকায় গিয়ে আমেনাকে নিয়ে আসেন। এরপর ২৫ মে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
The Daily surjodoy
আকলিমা বলেন, মেয়েটাকে শ্যামলীর কাছে দিয়েছিলাম ভালো থাকবে বলে। কিন্তু তার এই অবস্থা করবে ভাবতেই পারিনি। আমি আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বাদল সিকদার ও শ্যামলী বৈরাগীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
The Daily surjodoy
হাসপাতালে আমেনাকে চিকিৎসা দেওয়া যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার সরকার জানান, তার শরীরে অসংখ্যা পোড়া বা ছ্যাঁকার দাগ এবং নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষত শুকিয়ে গেছে। অনেক দিন ধরেই এই ক্ষতগুলো হয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
The Daily surjodoy
যশোরে ফেরার পর আমেনাকে হাসপাতালে ভর্তিতে সহযোগিতা করেন রক্তদাতা ও সামাজিক সেবামূলক সংগঠন স্বজন সংঘের সাধারণ সম্পাদক সাধন কুমার দাস। তিনি জানান, জোহরা খাতুন প্রথমে আমেনাকে নিয়ে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। এমন নির্যাতনের খবর পেয়ে তিনি ও তার সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় কুমার নন্দী তাদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। মামলা করার জন্য যশোর কোতোয়ালি থানায়ও যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু থানা থেকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
The Daily surjodoy
ধন কুমার দাস জানান, আমেনার মা ও নানি অসহায় দরিদ্র মানুষ। তাদের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে মামলা করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি মামলা দায়ের ও নির্যাতনকারীদের শাস্তির জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।