ডেস্ক: করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টা চলেছ। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে কয়েকটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বা টিকার পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এ তালিকায় এবার যোগ হয়েছে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকা। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে উদ্ভাবিত দুটি সম্ভাব্য টিকা পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে জানানো হয়, এরই মধ্যে প্রথম স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সম্ভাব্য টিকাটি। পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩০০ স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবী। গবেষকেরা বলছেন, যদি সম্ভাব্য টিকাটি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয় এবং স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়, তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা শুরু হবে।
এর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা শুরু হয় যুক্তরাজ্যে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য ওই টিকার পরীক্ষা গত সপ্তাহের শেষ দিকে ব্রাজিলে শুরু হয়েছে। এই টিকা উদ্ভাবন কার্যক্রমে দাতা প্রতিষ্ঠান লেম্যান ফাউন্ডেশন গত সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এই পরীক্ষায় সাও পাওলোয় ২ হাজার এবং রিও ডি জেনিরোয় ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিচ্ছেন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন গত মঙ্গলবার বলেছে, তাদের সম্ভাব্য টিকাটি পশ্চিম লন্ডনে এক স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই স্বেচ্ছাসেবীর শারীরিক অবস্থা সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত ভালো ছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রবিন শ্যাটকের নেতৃত্বে একদল গবেষক নতুন ভ্যাকসিন পরীক্ষায় কাজ করছেন। ভ্যাকসিনটি প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি কার্যকর রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরির প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২০ টির বেশি ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ইম্পেরিয়াল কলেজের টিকা দুটি অগ্রগামী।
ফাইন্যান্স ক্ষেত্রে কাজ করা ক্যাথি (৩৯) প্রথম ইম্পেরিয়াল ভ্যাকসিন পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। প্রথম ধাপের ৩০০ জনকে ভ্যাকিসন দেওয়ার পর অক্টোবর নাগাদ আরও ৬ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন গবেষকেরা।
ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক দল আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাঁরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবেন।
অনেক প্রচলিত ভ্যাকসিন মূলত দুর্বল বা জিনগত পরিবর্তন করা ভাইরাসের অংশ থেকে তৈরি করা হয়। তবে ইম্পেরিয়ালের ভ্যাকসিনটি নতুন পদ্ধতিতে তৈরি। এতে জেনেটিক কোডের সিনথেটিক তন্তু বা আরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে, যা মূলত ভাইরাসের নকল হিসেবে কাজ করে। এটি পেশিতে ইনজেকশন আকারে পুশ করা হলে আরএনএ নিজেকে বর্ধিত করে এর কপি তৈরি করে এবং শরীরের কোষগুলোকে স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে নির্দেশ দেয়। এতে দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা করোনাভাইরাসকে চিনতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে লড়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে।