রোস্তম আলী: রংপুর জেলা প্রতিনিধি
পীরগঞ্জে দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায়াত স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত।
গত রবিবার দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনসহ পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠন, মহাজোটের শরীক দলসমূহ এবং ড. এমএ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন দিনভর সীমিত পরিসরে নানান কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবি সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতাগণ লাল দীঘি ফতেপুরের জয় সদনে প্রয়াত বিজ্ঞানীর কবরে ফুলের শুভেচ্ছা, শ্রাঞ্জলি দিয়ে কর্মসূচির আরম্ভ করেন।
বিকেলে জয় সদন প্রাঙ্গণে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রয়াত বিজ্ঞানীর কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ৩ টায় আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলার গোপিনাথপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রঙ্গণে আলোচনা, মিলাদ, দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে যুক্তছিলেন-জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, প্রয়াত বিজ্ঞানীর ভাতিজা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছায়াদত হোসেন বকুলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জে জন্ম গ্রহণ করেন। ডাকনাম তার ‘সুধা মিয়া’ হিসেবে পরিচিত, অসাধারণ মেধার অধিকারী এ বরেণ্য ব্যক্তি শৈশব থেকেই শিানুরাগী ছিলেন, এ কর্মবীর বিজ্ঞানী ২০০৯ সালের ৯ মে পরলোক গমন করেন। তিনি ছিলেন দেশে আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ।
তিনি পরমাণু গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন, তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দতা ও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর গবেষণা কর্মের পরিধি ছিল বিস্তৃত, তিনি ফান্ডামেন্টাল ইন্টারেকশন এন্ড পার্টিক্যাল ফিজিক্স, নিউকিয়ার এন্ড রেক্টর ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স,
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, হেল্থ এন্ড রেডিয়েশন ফিজিক্স, রিনিউবল এনার্জি ইত্যাদি েেত্র গবেষণা করেন। তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের দু’বার সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ পদার্থ বিজ্ঞানী সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯৯৭ সালে তাঁরই পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় সমন্বিত উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হয়ে কিছু দিন জেল হাজতেও ছিলেন।
১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের পাশে থেকে তাঁদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন।
তিনি ঢাকা রংপুর জেলা সমিতির আজীবন সদস্য এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দুবছর মেয়াদকালের জন্য এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং ঢাকাস্থ বৃহত্তম রংপুর কল্যাণ সমিতি,
উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মির্জাপুর বছির উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
মৃত্যুর পর এ গুণি ব্যক্তির শেষ ইচ্ছানুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাধিত করা হয়।