রংপুর ব্যুরো:
রংপুর মেট্রোপলিটন হাজীর হাট থানাধীন মহানগরীর ১নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা শ্রী সুপাত চন্দ্র রায় (৩২) এর মৃত্যু নিয়ে রসিক’র দুই কাউন্সিলর এর নাটকীয় ভূমিকা, ঘটনা দ্রুত ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত ছিলেন ১ ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পিছিয়ে নেই ১০,১১,১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর।
শ্রী সুপাত রংপুর মহানগরীর ১১নং ওয়ার্ডের রায়পাড়ার পকি ফান্ধা গ্রামের বাসিত চন্দ্রের ছেলে। সুপাত পেশায় একজন রাইস মিল মিস্ত্রি। সে ২ সন্তানের জনক, দীর্ঘদিন যাবৎ পার্শ্ববর্তী শেখটারী জনৈক জাকারিয়ার রাইস মিলের হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে আসছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে রণচণ্ডী এলাকার হাফিজুল তার বাড়িতে এসে মিলের বিয়ারিং ঠিক করে দেবার কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে যান তার মিলে। পরে সুপাত বটতলা এলাকার মোন্নাফের ছেলে সাদেকুলের মিলের বিয়ারিং ঠিক করে দেন এবং গত ৪/৫ দিন যাবৎ সেই মিলের হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে আসছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ২টার দিকে জানাজানি হয় সুপাত মোন্নাফের মিল সংলগ্ন (বরেন্দ্র) ডিপ টিউবয়েল এর নিচে প্রস্রাব করতে গিয়ে মারা গেছে।
সুপাতের বড় শালিকা বিনোদিনী চক্রবর্তী জানান, আমার ছোট ভগ্নিপতি দীর্ঘদিন যাবৎ পার্শ্ববর্তী শেখটারীর জাকারিয়ার মিলে হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে আসছিলেন, তবে জাকারিয়ার মিলে প্রতিদিন তাকে যে বেতন দেয়া হতো তা অতি সামান্য ২৫০/৩০০ টাকা। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো বেশ কঠিন। পরে সে ভালো বেতনে গত ৪/৫ দিন মিজানের ভাড়া করা মিলে হলুদ ও মরিচ ভাঙ্গার কাজ করে আসছিল।
১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ১:৪০ টায় মিজান ফোন করে সুবাতের পরিবারের লোকজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাকেন। পরে আমরা তড়িঘড়ি করে বের হতে না হতেই প্রায় ২০/২৫ মিনিটের মধ্যে অর্থাৎ রাত ২টার দিকে, চৌধুরীর হাট দক্ষিণ পানাপুকুর এলাকার বাসিন্দা আবু তালেবের অটোযোগে সুবাতের মরদেহ বাড়িতে পাঠান মিল মালিক মিজান। আমরা মনে করি, ন্যাক্কারজনকভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। সুপাতের দুই শিশু সন্তান গুপিকান্ত (১৫) প্রীতম (৬) ও প্রতিবন্ধী স্ত্রী হিমোদীনি পুতুল এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কে নিবে দায়িত্ব সুপাতের দুই শিশু সন্তানের? আবেগঘন মুহূর্তে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ ক্ষেপে যান রংপুর সিটি কর্পোরেশন’র ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম সরোয়ার মির্জা, এবং তিনি বলেন, এদের সাথে কথা বললে কি সমস্যার সমাধান হবে? কাউন্সিলর মির্জা সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনারা এখানে কেন এসেছেন? আপনাদেরকে কে ডেকেছে? এখানে হত্যাকাণ্ডের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা জনপ্রতিনিধিরা আছি আমরা এটা আপোষ মিমাংসা করেছি সেখানে ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ও মহিলা কাউন্সিলর শামীমা আক্তার সুমিও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের সাথে কথা হয়েছে এটা স্বাভাবিক মৃত। ৭১ টিভির রংপুর প্রতিনিধি বায়েজিদ আমার বন্ধু আপনারা কোন সাংবাদিক আমি সেটা দেখে নিবো। বায়েজিদ আমাকে ফোন দিয়েছিল আমি বলেছি এখানে আমি আছি পরে আর সে আসেনি। পরে তিনি আবার উপস্থিত সাংবাদিকদের এক বাড়িতে ডেকে নিউজ না করার জন্য টাকা অফার করেন।
ঘটনাস্থালে গিয়ে দেখা যায় মোন্নাফের মিলে তালা ঝুলছে, পরে তার বাড়িতে গেলে মোন্নাফের ছেলে সাদেকুলের স্ত্রী পরিচয় দানকারী বলেন, আমরা এখন মিল চালাই না মিল ভাড়া দিয়েছি মিজানকে। পরে মোবাইল ফোনে মিজানের নিকট সুপাতের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই বাড়িতে আছি। পরে তার বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন। এবং পরিবারের লোকজন বলেন, মিজান ওই মিলের মালিক নয়। সে বর্তমানে ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম’র সাথে আছেন, পরে মিজানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেনি এমনকি কিছুক্ষণ পরে ফোনটি বন্ধ করে রাখেন। মিলের ভাড়াটিয়া মালিক মিজানের ভাবী মঞ্জুরুলের স্ত্রী মনসুরা বেগম জানান, আমার স্বামীর মুখে শুনেছি, ওরা একই সাথে কাজ করতো ঘটনার সময় মিলে কাজ করার একপর্যায়ে সুপাত প্রস্রাব করার উদ্দেশ্যে কারখানার বাইরে যান। সে মিলে ফিরতে দেরি হলে পরে আমার স্বামী বাইরে গিয়ে দেখেন সুপাত পড়ে আছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন হাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া সুপাতের মৃতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার মরদেহ বাড়ি থেকে এনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে, ভিসেরা পাঠানো হয়েছে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা। তবে সুপাতের মৃত্যুতে একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে, আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি।