ছয় পেরিয়ে সাতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশান্ত কুমার পোদ্দার
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়েছে। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্ধযুগে পদার্পণ করলো। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। দেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় সংসদে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর থেকেই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
২০১০ সালের ৮ মে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
শুরু থেকেই ভারতের শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলার পরিকল্পনা করা হয়। ২৫ বৈশাখ কবির ১৫৪তম জন্মবার্ষিকীতে ২০১৫ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১১ মে, ২০১৫ সালে মন্ত্রী সভার বৈঠকে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আইন, ২০১৫’- এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে বিলটি সংসদে উত্থাপন করার পর পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জুলাই ২০১৭ তে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিল-২০১৬’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়।
২০১৭ সালের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম উপাচার্যের মেয়াদ শেষে পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: শাহ্ আজম।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ২টি অনুষদের অন্তর্ভুক্ত মোট ৩টি বিভাগে ১০৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের বিসিক বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের নবনির্মিত ভবনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে মাওলানা ছাইফ উদ্দিন এহিয়া কলেজকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-২ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় ২ টি কলেজের ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম ও ভাড়া করা দুটি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ২টি অস্থায়ী একাডেমিক ভবন, ২টি অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবন, ১টি আদর্শ ও সুগঠিত লাইব্রেরি, ১টি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে রয়েছে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মেধাকে শাণিত করার জন্য রয়েছে বিতর্ক ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, বিএনসিসি সহ বিভিন্ন গঠনমূলক সংগঠন। নিজস্ব ক্যাম্পাসবিহীন ভাবে পরিচালিত একাডেমিক কার্যক্রম এবং করোনা সেশনজটের পরেও বর্তমান উপাচার্যের সুদক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামী ফেব্রুয়ারীতে ১ম বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন করার চিন্তা করছে বর্তমান উপাচার্য।
বর্তমানে ৪টি অনুষদের অধীনে মোট ৫টি বিভাগে ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রয়েছেন ২৬ জন দক্ষ শিক্ষক, ৫২ জন কর্মকর্তা ও ১১৪ জন কর্মচারী।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা শহর হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির নিজস্ব জায়গায় নির্মিত হবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন। সেসবের মধ্যে অন্যতম হল অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জন্য প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস থাকার সুবাদে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম এর পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পরিচালনা করতে পারেন। জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি পড়াশুনার একঘেয়েমি দূর করার জন্য ক্যাম্পাসের আড্ডা একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে আবাসিক হল এর প্রয়োজনীয়তা অবর্ণনীয়। তাই অচিরেই একটি সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে সময়েরও দাবি। গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বদরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে। নিজেদের ক্যাম্পাসে বিচরণের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার এক বিশাল প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই অধ্যাপক ড. মো: শাহ্ আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অসংগতি দূর করে এর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে গতিশীল করেন। আড়ম্বরপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করেন এবং বিভিন্ন সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সুযোগ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে দায়িত্ব নেন। এছাড়াও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে তিনি অগ্রগামী উদ্যোগ নিয়েছেন।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..