রাসেল চৌধুরী:
মুসলমানদের পবিত্র মাস মাহে রমজান শুরু এখনও ২৭ দিন বাকি থাকলেও দেশের খোলা বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ছোলার দাম।
মাসখানেক আগেও ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। এখন ভালো মানের ছোলা কেজি ৯৫ টাকা এবং কিছুটা দুর্বল মানের ছোলা কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় খোলা বাজারে বোতলজাত সয়াবিনে দাম না বাড়লেও বেড়েছে খোলা পর্যায়ে পাম ও সয়াবিন তেলের দর। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ দর অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ এবং পাম তেলের লিটার ১১৭ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। দুই সপ্তাহ ধরে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭২ থেকে ১৭৫ এবং পাম তেল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর দক্ষিণ খাঁন এলাকার মুদি দোকানি সাইফুল বলেন, খোলা তেলের দাম পাইকারিতে বেড়ে যাওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া বোতলজাত তেলের মোড়কে দাম না বাড়ানো হলেও পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা কম লাভ করে বোতলের গায়ে লেখা দামে বিক্রি করছে।
চিনির বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি এখনও থিতু হয়নি। সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযানের ভয়ে বাজারে একরকম লুকিয়ে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটজাত চিনি। দোকানিরা পরিচিত ক্রেতাদের কাছে ১২০ টাকা দরে চিনি বিক্রি করছেন। যদিও প্যাকেটে লেখা ১১২ টাকা। এছাড়া খোলা চিনির কেজিও বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। তবে আগের মতো সব দোকানে চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা যায়নি।
ব্রয়লার ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে, চালের বাজারে উল্টো বাঁক। কাঁচামরিচের দাম তিন-চার দিন ধরে বাড়তি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। এদিকে শীতের সবজির মৌসুম প্রায় শেষ বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢুকছে। তবে সেগুলোর দাম চড়া।
ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা কমে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং ফার্মের ডিমের ডজন ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। ব্রয়লারের দাম কমলেও আগের মতোই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। প্রতি কেজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক ধরে বাড়ছে গরুর মাংসের দামও। পাড়া-মহল্লার দোকানে কেজি কিনতে হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে।
শীতের সবজির মৌসুম প্রায় শেষ। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢুকছে। তবে সেগুলোর দাম চড়া। এর মধ্যে ঢ্যাঁড়সের কেজি ৬০ থেকে ৭০, ঝিঙ্গে, বরবটি এবং করলা ৭০ থেকে ৮০, পটোল ৮০ থেকে ৯০, ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে।
এ বছর ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার কয়েক দফা শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেয়। কিছু চাল আমদানিও হয়েছে। তবু দাম সেভাবে কমেনি। মাঝে মাসখানেক স্থির থেকে ফের বাড়ছে।
সরকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে দুই শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এই হার আরও বেশি। এ সময় গড়ে চার শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝারি (পায়জাম, লতা, বিআর-২৮) চালের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং সরু চালের (মিনিকেট) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং সরু চাল ৬২ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চালের দাম বেড়েছে, এটা বলা ঠিক হবে না। দুই-এক টাকা মাঝেমধ্যে ওঠানামা করে।
মাসখানেক ধরে আটা ও ময়দার দামও সামান্য কমছে। টিসিবির তথ্য বলছে, আটা ও ময়দার দাম গড়ে তিন শতাংশ কমেছে। কাঁচামরিচের দাম তিন-চার দিন ধরে বাড়তি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। তবে ২৫০ গ্রাম কিনতে গেলে বিক্রেতারা দাম রাখছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।