আবুল হাশেম, স্টাফ রিপোর্টার :
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের নির্যাতন যেন থামার নয়। সম্প্রতী এক হাজতী বন্দীকে তিনজন কারারক্ষী মিলে বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আঘাতপ্রাপ্ত বন্দীর হাত, পা ফুলে যায় এবং ঠোট ফেটে রক্ত বের হয়।
জামিনে মুক্ত একাধিক বন্দি সূত্রে জানা গেছে, সেই বৃটিশ আমলের পুরোনো ঘরে আজও রাখা হয় হাজার হাজার বন্দীদের। ধারন ক্ষমতার চেয়েও প্রায় দ্বিগুন বন্দী রয়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। ফলে সিভিল ওয়ার্ডে থাকা শত শত বন্দীরা চর্ম রোগ ও পঁচড়ায় আক্লান্ত হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মাথা ব্যাথা কতটুকু সেই বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে কারাগারের বাইরের চিত্র দেখলে মনে হবে কত উন্নত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার। বড় বড় ভবন। আর চকচকে উজ্জল লিখা “রাখিব নিরাপদ দেখাবে আলোর পথ”। অথচো কারা অভ্যান্তরে দ্বিগুণ দামে বাড়ালেই মেলে ইয়াবা হেরোইন গাঁজা। মেডিকেলে মেলে ঘুমের বড়ি। ভূক্তভোগী অনেক অভিভাবক মাদকাশক্ত সন্তানকে মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। ছেলে মাদকমুক্ত হবে সেই আশায়। কিন্তু কারাগারে গিয়েও তারা নেশা খায়। বাইরে বেরিয়ে যাহা লাও, তাহাই কদু। ফের মাদক সেবন করতে থাকে। তাহলে নিরাপদ কোথায়? এমনই অভিযোগ অনেক অভিভাবকদের। এ নিয়ে অভিভাবকরা চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। কারাগার সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু সিপাই জামাদার বিক্রি করেন মাদক। আবার তারাই উদ্ধার করেন মাদক। সেই মাদকের অপরাধে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয় বন্দীদের। আবার জেলের কেস বলে একটা বাক্য আছে, সেই অদৃশ্য কেস থেকে বাঁচতে বন্দীকে দিতে হয় টাকা। কিন্তু প্রকৃত অপরাধিরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এছাড়াও রয়েছে বেড বানিজ্য, কারা অভ্যান্তরে ক্যান্টিন-এ নিম্ন মানের খাবার। সেই খাবারের দামটাও বেশ চওড়া। সবমিলে দীর্ঘ শত শত বছরের অনিয়ম দূর্ণীতি যেন বন্ধ হবার নয়। সেই সাথে পুরো কারাগারের ঘরের ওয়ালের প্লাষ্টার চটে ও ধসে পড়া ঘরেই ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। মেরামত হয় না, তা নয়, তবে ধসে পড়া প্লাষ্টারের মেরামত। এছাড়াও রয়েছে গনশোচাগার। নাক মুখ না ঢেকে বাথরুমে ঢুকলেই বমি উঠে আসে। যেমন অপরিষ্কার তেমনি পুরোনো। তারপরও বন্দীদের উপায় নাই। সেখানেই জরুরী কাজ সারতে হয়। এ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, গুঞ্জন কোনটাই কাজে আসে না। কারাগারের বাইরে উঠছে নতুন নতুন ভবন। আর কারা অভ্যান্তরে ২০০ বছরের স্যাত স্যাতে ঘরেই থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন ভেতরের ও বাইরে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বন্দী ও কারাগার সূত্রে জানা যায়, ফায়জুল ওরফে ফাইসালের কাছ থেকে অবৈধ খাবারের টোকেন উদ্ধার করেছেন কারা কতৃপক্ষ। সে নগদ টাকার বিনিময়ে বেশ কয়েকজন আসামীদের খাবার সাপ্লাই দেয়। সেই টাকা কারারক্ষী দ্বারা নিজ পিসি বইয়ে জমা করায়। সাবেক মেডিকেল রাইটার শামীম ও রবিউল তারা গাঁজার কারবার চলাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন্দী নির্যাতনের বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে জেলার মোঃ নিজাম উদ্দীন বলেন, জেল খানায় এত বড় ঘটনা ঘটলো অথচো আমি জানলাম না!
সিনিয়র জেল সুপার মোঃ আব্দুল জলিল জানান, বন্দী নির্যাতণের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।