সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খেয়াঘাট আর কেয়ামনির সন্তান প্রসবের জন্য যুদ্ধযাত্রা
মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি গ্রামে নেই কোন রাস্তাঘাট। যোগাযোগের একমাত্র উপায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। সেখানে একমাত্র যান সাইকেল ভ্যান। কিন্তু বর্ষায় সেখানে হাটু কাঁদা। এই কাঁদা ঠেলেই খেয়াঘাট। তারপর নৌকা ট্রলার চড়ে নদী পার হতে হবে। অন্য কোন যানবাহনে সড়ক পথে ১২ কি. মি. পাড়ি দিয়ে যেতে হবে উপজেলা সদরে। এরপর হবে চিকিৎসা। সে সুযোগ অনেকেরই কপালে জোটে না। পথেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় অনেকের। এটাই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা-পদ্মপুকুরের মানুষের জীবন চিত্র।শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ইমরান হোসেন জানান, তার স্ত্রী কেয়ামনি (২০) প্রথম সন্তান সম্ভবা। গত শুক্রবার মধ্যরাতে তার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। সন্তান প্রসবের জন্য গ্রাম্য চিকিৎসক ও ধাত্রী ডেকে আনা হয়। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন নরমাল ডেলিভারির জন্য। দেরী হওয়ায় প্রসূতির শারীরিক অবস্থাও সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। শনিবার সকাল পর্যন্ত সব ধরনের চেষ্টার পর তারা ব্যর্থ হয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।এরপরই শুরু হয় হাসপাতালে নেওয়ার দৌড় ঝাপ। কিন্তু বললেই তো আর হাসপাতালে নেওযা যায় না। চন্ডিপুর থেকে বুড়িগোয়ালিনি খেয়াঘাটের দুরুত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। নৌকা বা ট্রলার আগে থেকে বলে না রাখলে পাওয়া যায় না। ফলে বর্ষাকালে হাটাই একমাত্র উপায়। কিন্তু ১০ কি.মি. যাতায়াতের পথে হাটু কাঁদা। এই কাঁদা ঠেলে স্বাভাবিক অনেকের পক্ষেই যাতায়াত করা অসম্ভব। সেখানে একজন সন্তান সম্ভাবা অসুস্থ্য প্রসূতির নিয়ে যাওয়াটা অনেকটা অসাধ্য ব্যাপার।প্রসূতি কেয়ামনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, নিরুপায় হয়ে যন্ত্রণাকাতর বৌমাকে দোলনার দড়ির ওপর শুইয়ে তার ওপর বাঁশ বেধে কাঁধে নিয়ে খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালি খেয়াঘাটে নেওয়া হয়। সেখানে নৌকা খুঁজে ভাড়া চুক্তি করতে আরো খানিকটা সময় দেরি হয়ে যায়। পরে খেয়া পারাপারের জন্য রাখা ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকায় প্রসূতি কেয়া মনিকে নিয়ে রওনা দেওয়া হয় উপজেলার নওয়াবেকী খেয়াঘাটের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ধাত্রীসহ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাও। সেখানে পৌঁছে সড়ক পথে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছতে পাড়ি দিতে হবে আরো ১২ কিলোমিটার। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে নৌকার মধ্যেই ডেলিভারি হয় একটি পুত্র সন্তান।রোববার দুপুরে কেয়ামনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, বর্তমানে প্রসূতি মা ও নবজাতক দু’জনেই সুস্থ আছে। একটু ভালো মানের চিকিৎসা ও প্রসূতিসহ নবজাতকের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সেখানে ডাক্তার ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে ভালো আছেন। প্রসঙ্গত, গত ছয় মাসে দুইজন প্রসূতি উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী খেয়াঘাটে পৌঁছানোর আগেই নৌকার মধ্যেই সন্তান প্রসব করেছেন বলে জানান এলঅকাবাসী।