জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধি
লাশ উদ্ধারের একদিন আগেও ‘মেরে ফেলার’ আতঙ্কে ছিলেন দুই বোন রাণী মজুমদার (৩৮) ও ফাতেমা বেগম (২৭)। পরদিন সকালে সেই আতঙ্ক সত্যি হলো। দুই বোনের ঝুলে থাকা লাশ মিলল নিজ বাসার ছাদে। পিলারের আলাদা দুটি রডে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছিল লাশ দু’টি।
এ ঘটনা নগরীর ৪নং ওয়ার্ডের মজুমদারী কোনাপাড়ার এলাকার ৩১ নং বাসার। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টায় পুলিশ খবর পেয়ে বাসায় গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে। মৃত রাণী ও ফাতেমা মজুমদারি এলাকার মৃত কলিম উল্লার মেয়ে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই বাসায় মা, দুই ভাই ও তিন বোন থাকতেন। আরেক বোন বিয়ের পর যুক্তরাজ্যে থাকছেন। পরিবারের সদস্যরা চাপা স্বভাবের ছিলেন। তাদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগ কম ছিল। সকালে হঠাৎ বাড়ির ছাদে দুই বোনের ঝুলন্ত লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, তারা মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তবে কারও সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করতেন না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী বলেন, দুই বোনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা অনেকটা রহস্যজনক। দুই বোন সোমবার রাতে দা হাতে নিয়ে চাচার বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে সেখানে বেশ কিছু সময় অবস্থানের পর বাড়ি ফিরে যান। দুই বোনের চাচা প্রতিবেশী ধানাই মিয়া। তিনি বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার ছেলে রিপন মিয়ার বরাত দিয়ে তিনি জানান, সোমবার রাত ১২টায় দুই বোন তাদের বাড়ির ঢুকে ফটকে ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রবেশফটক খুলে দিলে তারা ঘরে আতঙ্কিত হয়ে দা হাতে ঢুকেন। কী ঘটেছে জানতে চাইলে তারা আতঙ্কিত হয়ে বলেন, তাদের মেরে ফেলা হবে। তবে কারা মেরে ফেলবে, বিষয়টি তারা পরিষ্কার করেননি। পরে রাতেই তাদের বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন রিপন মিয়া। আজ সকালে তাদের লাশ পাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়।
রেজাউল হাসান লোদী বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। তাদের বক্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধী। পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
সিলেট বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মুহাম্মদ মইনুল জাকির বলেন, লাশ দুটি একটি ছাদের একই পিলারের আলাদা দুটি রডে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটি আত্মহত্যা কি না তিনি সে মন্তব্য করতে চাননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে, এটি আত্মহত্যা না হত্যা।