মিজানুর রহমান মিজু নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে এক কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেতু রয়েছে। কিন্তু সেতুগুলোর কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার রুপনারায়নকুড়া ও নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
দুইটি সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে রয়েছে ধান ক্ষেতের আইল। এতে সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা মানুষও ঠিকমতো পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না। তাই সেতু দুইটির সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, উপজেলার রুপনারায়নকুড়া ও নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মরা খালি খালের উপর দুইটি সেতু নির্মাণ করা হয়৷ নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ছালুয়াতলা গ্রামে অবস্থিত সেতুটি ২২ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়৷ অপরটি রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ১৬ লাখ টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেতু দুইটি নির্মাণ করা হলেও কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
রূপনারায়নকুড়া ইউপির কৃষ্ণপুর গ্রামের সেতুটি দিয়ে বরুয়াজানী, কালাপাগলা, আয়নাতলী, কদমতলী, মাথাফাটা বাজার, মাদরাসা বাজার গ্রামের লোকজন যাতায়াত করেন। এছাড়া কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কদমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের যাতায়াত করার মাধ্যম এই সেতুটি।
এছাড়া, নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ছালুয়াতলা গ্রামে অবস্থিত সেতুটি দিয়ে আয়নাতলী, গোজাকুড়া, গাছগড়া, গেরাপঁচা, কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষেরা যাতায়াত করেন। সেতু দুইটির সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ধান ক্ষেতের আইল। ছালুয়াতলা গ্রামে অবস্থিত সেতুটি ক্ষেতের আইল থেকে কিছুটা উঁচুতে রয়েছে। তাই এলাকাবাসী মাটিও বালুর বস্তা ফেলে ক্ষেতের আইল ও সেতুর মাঝে সমতা এনে চলাচলের উপযোগী করেছেন।
এছাড়াও কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত সেতুটিতে ক্ষেতের আইল ও মরাখালী খালটির পাশ দিয়ে সেতুতে উঠার সুযোগ থাকলেও সেই সেতু থেকে অপরপ্রান্তে নেমে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
আয়নাতলী গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘অনেক বছর ধইরা তো সেতু দুইটা এই অবস্থায় দেখতেছি। সেতু দুইটায় যাওয়ার মতো রাস্তা নেই। অনেক কষ্টে সেতু গুলায় উঠা লাগে। অনেকবার সেতুতে উঠার সময় পইরা গিয়া ব্যথাও পাইছি। কেউ মারা গেলে লাশ নিয়া গোরস্তানে যাওয়া লাগে ক্ষেতের আইল দিয়া। সেতু থাকলেও এইডা ব্যবহার করবার পাইনা রাস্তার অভাবে। চাষবাসের পর ধান গুলাও আনবার পাইনা।’
ছালুয়াতলা গ্রামের এনায়েত হোসেন বলেন, প্রায় ৮-৯ বছর যাবত সেতু দুইটি অকেজো পড়ে আছে। সরকার এত টাকা ব্যয় করে সেতু দুইটা বানাইছে, এখন পরিকল্পনা করে সড়ক বানাইয়া দিলে আমাদের খুব উপকার হইতো।
কৃষ্ণপুর গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, ‘ক্ষেতের আইল দিয়া হাঁইটা গিয়া সেতুতে উঠা লাগে। একটা সেতুতে আমরা নিজেরা মাটি ফালাইয়া আর বালুর বস্তা দিয়া উঁচা করছি। কারণ রাস্তা থেকে উঁচা সেতুটাতে উঠবার গিয়ে এর আগে আমি নিজেই পইরা গিয়া ব্যথা পাইছিলাম। সেতুর সঙ্গে যদি পাকা সড়কের সংযোগ করে দিতো তবে আমাগো আশেপাশে অন্তত ১০ টা গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের উপর মানুষ উপকৃত হইতাম।
কালাপাগলা গ্রামের কৃষক মন্তাজ আলী বলেন, কৃষ্ণপুর গ্রামের সেতুতে কষ্ট কইরা উঠা গেলেও পার হমু কোন দিক দিয়া? বৃষ্টি হইলে পানি জইমা থাকে। পুলাপান গুলা স্কুলে যাইবার পায়না। সেতুটায় একটা পাকা সড়ক থাকলে পুলাপানের পড়াশুনা আর আমাগো কৃষিকাজ করতেও অনেক সুবিধা হইত।
রুপনারায়নকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখানে সংযোগ সড়ক বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সড়ক নির্মাণ করা গেলে দুই ইউনিয়নের অনেক মানুষ উপকৃত হতেন।
নালিতাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, যেহেতু মরাখালী খালের ওপর কোনো রাস্তা নেই। তাই খাল খননের কাজ করা হলে সেই মাটি দিয়েই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। তাহলে দুই ইউনিয়নের বাসীন্দারাই সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘উপজেলার নালিতাবাড়ী ও রুপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু দুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেতু দুটি পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জনদুর্ভোগ লাঘবে চলতি অর্থ বছরেই সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।’