মমিন আজাদ (নীলফামারী): ট্রেন চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে মালবাহী ট্রেনের প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটত। এ কারণে দীর্ঘদিন পর এখানকার লুপলাইনগুলোর সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সংস্কার কাজ দায়সারাভাবে করার অভিযোগ ওঠেছে। সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ও রেলওয়ে কর্মচারীররা। সংস্কার কাজ যথাযথ না হওয়ায় ওই রেলপথে ফের ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, কাজের মানের সাথে কোনো আপোস করা হবে না। অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্কার কাজ পরিদর্শণ শেষে নিম্নমানের উপকরণ অপসারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ওয়াগন থেকে ভেকুমেশিন দিয়ে পন্যবাহী ট্রাকে পাথর লোড করার কারণে সৈয়দপুর স্টেশণের পূর্বপাশের লুপলাইনগুলো বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়। এতে করে মালবাহী ট্রেনের প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটত। এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়। এর কারণে স্থানীয় রেলওয়ে দপ্তর ওই লাইন চলাচলের জন্য অনুপোযোগী ঘোষনা করে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লুপলাইন সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করে। দরপত্র অনুযায়ী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে রেলওয়ের সংকেত ঘর ও দক্ষিনে দুই নং রেলক্রসিং পর্যন্ত ১হাজার ৪৪০ মিটার রেলপথ সংস্কারের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।
দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কার কাজটি পায় যশোরের মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন নামে রেলওয়ে ঠিকাদারী এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে। আগামী জুলাই মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের দায়িত্বশীল দু’জন কর্মকর্তা বলেন, সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি রেলপথের রেল লাইন উত্তোলনের পর ১ ফুট ৯ ইঞ্চি (২১ ইঞ্চি) গভীর করে বক্স আকারে নিচের অংশ (সাববেজ) তৈরি করার কথা। কিন্তু ২১ ইঞ্চির জায়গায় কোথাও কোথাও মাত্র ১০-১১ ইঞ্চি গভীরতায় সাববেজ করা হচ্ছে। তাছাড়া সাববেজ তৈরিতে খোয়া ও বালুর মিশ্রণ ৬০ অনুপাত ৪০ হওয়ার কথা তা করা থাকলেও বালুই বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া ৩৮ মিলিমিটার পরিমাপের খোয়া ব্যবহার করার কথা তার চেয়ে অনেক বড় আকারের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে সাববেজ ঠিকমতো কমপ্যাক্ট না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খোয়া দেওয়া হচ্ছে। আর রেলপথের পাশের মাটির নিচ পাড়ে থাকা পুরাতন তিন নম্বর ইট তুলে তা খোয়া করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি মালিকের সাথে একাধিকবার চেস্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধি মো: রবিনের কাছেও জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. সুলতান মৃধা বলেন, সংস্কার কাজটি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর কাজের মান যাচাই করার দায়িত্ব স্থানীয় রেলওয়ে কার্য বিভাগের। তাই বিষয়টি কার্যবিভাগই বলতে পারবেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসকারী প্রকৌশলী (কার্য) শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই সংস্কার কাজ এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করা হয়েছে। এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ নিয়ে কথা হয় সিনিয়র সহকারী উর্ধ্বতন প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালিউল হকের সাথে। তিনি বলেন, কাজের মানের সাথে কোনো আপোস করা হবে না। কাজের মান শতভাগ বুঝে নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কারকাজ নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি।