মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই লাল সবুজের বাংলাদেশে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের নামে বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে নিয়ে মিটিং করেন। মিটিংয়ে প্রত্যেক বাজার থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দাবি করা হয়। ইউএনও’র নির্দেশ মোতাবেক প্রত্যেকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় মাতব্বররা বাজারের চায়ের দোকান, পানের দোকান, সেলুন, মুদি ব্যবসায়ী, তৈরি পোশাকের দোকান, ফার্মেসি, জুয়েলারি দোকান, খাবার হোটেল, স’মিল ও এনজিওসহ সকল প্রকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে।
চাঁদা আদায়ের রশিদ
সূত্র জানায়, এসব চাঁদা সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফান্ডে জমা দেয়া হচ্ছে। আর যে সমস্ত দোকানদার বা ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে রাজি হয়নি, তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
অপরদিকে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম উপজেলার ৩টি অবৈধ ইটভাটা থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস পালনের নামে ১ লক্ষ করে টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ওই ইটভাটাগুলো থেকে চাঁদা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চকমিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি বিভিন্ন দোকেন দোকানে গিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালনের কথা বলে চাঁদা তুলছেন।
তিনি নিজেকে ‘বজ্রশক্তি’ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে ইউএনওর নির্দেশে বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা তুলছি। এই চাঁদার টাকা দিয়েই ইউএনও স্যারের সাথে সমন্বয় করে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে।
দোকানে দোকানে গিয়ে তোলা হচ্ছে চাঁদা
এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউএনওর নির্দেশে হাট-বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে সহজ স্বীকারোক্তি দেন।ঘটনাটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
দৌলতপুর বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, স্বাধীনতা দিবস পালনের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। দোকান ভেদে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা চাইছে তারা। চাঁদা না দিতে চাইলে আমাদের দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে অথবা দোকান ভেঙে দেয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। কারো কারো কাছ থেকে আরো বেশি চাঁদা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, ইউএনও স্যার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আমি নানা দেনদরবার করে ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। এ নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে আমার অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে। বলে জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয় থেকে এসব কথা জানান।
দৌলতপুর উপজেলা বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে আমরা নিজেরাই বাজার থেকে টাকা তুলে ইউএনও স্যারের কাছে জমা দেবো। একটু আমোদ-ফুর্তি করার জন্য বাজার থেকে এসব টাকা তুলছি। স্থানীয় সাংবাদিক বিষয়টা জানেন।
এসব বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস বা অন্য কোনো দিবস উপলক্ষ্যে আমি কারো কাছ থেকে কোনো চাঁদা বা টাকা চাইনি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে কেউ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কিছু দিতে চাইলে সেটা নেয়া হয়।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে কারো কাছে কোন চাঁদা চাওয়া হয়নি। সরকার কর্তৃক বাজেট কম হওয়ায় বিভিন্ন হাট-বাজার কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বিত্তশালী ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে রেজুলেশন করে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, মহান স্বাধৗনতা দিবস উপলক্ষ্যে ইউএনওদের চাঁদা তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, চাঁদা তোলার বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সব খবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এ ক্লিক করুন।
Surjodoy.com