1. dailysurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  2. towhid472@gmail.com : TOWHID AHAMMED REZA : TOWHID AHAMMED REZA
হলুদ সাংবাদিকতা এক ধরনের নিকৃষ্টতা ও লজ্জার বহিঃপ্রকাশ
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশের উন্নয়ন শেখ হাসিনার প্রতিফলন : আ জ ম নাছির প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঢাকা ১৯ আসনে নৌকায় ভোট চাইলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানু’র ১০ ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত  বন্যায় আশ্রয়হীন পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করলেন ড. আবু রেজা নদভী এমপি আশুলিয়ায়  ৬ হাজার ইয়াবা ও ৪২২ বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্ৰেফতার ৪ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষা খুলনা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ এসপি সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান শ্রেষ্ঠ  নানিয়ারচরে ৩৬লিটার মদ জব্দ ৬জন কে জরিমানা সাভারের ডাকাত চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার

হলুদ সাংবাদিকতা এক ধরনের নিকৃষ্টতা ও লজ্জার বহিঃপ্রকাশ

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩, ৫.৫৭ পিএম
  • ২৫ বার পঠিত

আলতাফ হোসেন অমি  ও এম রাসেল সরকার:

হলুদ সাংবাদিকতা, এই শব্দটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। আমরা কি জানি? কাকে বলা হয় ‘ইয়োলো জার্নালিজম’ বা হলুদ সাংবাদিকতা এবং কীভাবেই বা এর সূত্রপাত? হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটি, সংবাদ জগতের এক নেতিবাচক দিককেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। সাংবাদিকতার মতো মহৎ পেশার জন্য হলুদ সাংবাদিকতা এক ধরনের অপবাদ, নিকৃষ্টতা ও লজ্জার বহিঃপ্রকাশ।

 

হলুদ সাংবাদিকতাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন কিংবা তুচ্ছ কোনো বিষয়কে চটকদার শিরোনামে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণকে তা পড়তে বা দেখতে বাধ্য করার নামই হলুদ সাংবাদিকতা। সত্য গোপন, মিথ্যাকে সত্যে প্রতিস্থাপন ও সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ করাই হলুদ সাংবাদিকতার একমাত্র নীতি বিবর্জিত মূলনীতি।

 

হলুদ সাংবাদিকতার মুখ্য উদ্দেশ্যই পাঠক, দর্শক ও শ্রোতার সংখ্যা বৃদ্ধি। কোনো নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে হলুদ সাংবাদিকতা, মিথ্যা প্রচারণা ও প্রতারণামূলক শিরোনামে গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে চায় সবসময়। দিন দিন চাটুকারিতা আর বিবিধ অনৈতিক চতুরতা হলুদ সাংবাদিকতাকে করেছে আরও বৈচিত্রময়। সাংবাদিকতার মুখোশে পাঠক বা দর্শকের আবেক ও আগ্রহকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা করাই হলুদ সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র।

 

হলুদ সাংবাদিকতার ইতিহাস মানেই জোসেফ পুলিৎজার এবং উইলিয়াম হিয়ার্টজ। তবে সাংবাদিকতার অগ্রযাত্রায় তাদের অবদান কীভাবে আলাদা এক মাইলফলক স্থাপন করেছে তা আমরা সবাই জানি। জোসেফ পুলিৎজার তার সাংবাদিকতা ও লেখালেখি বাবদ আজীবনের অর্জিত সব অর্থ-সম্পত্তি কলম্বিয়া স্কুল অব জার্নালিজমে দান করেছিলেন।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

যার মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে সাংবাদিকতা, নাটক, চিঠিপত্র, ইতিহাস, আলোকচিত্র, কবিতা, সঙ্গীতের মতো ২১টি বিভাগে সাংবাদিক আকারে পুলিৎজার পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। অন্যদিকে সাংবাদিকতার ইতিহাসে উইলিয়াম হিয়ার্টজের অবদানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

 

সংবাদ জগৎকে এগিয়ে নিতে তাদের দু’জনের ভাবধারাই ব্যাপক গুরুত্বের দাবিদার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কি আশ্চর্য!!! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতার সূত্রপাত হয়েছিল এই দুজনের হাত ধরেই! কীভাবে? ছোট করে সেই ইতিহাসই আজ জানবো।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

১৮৮২ সাল। উইলিয়াম হিয়ার্টজ, জোসেফ পুলিৎজারের ভাই অ্যালবার্ট পুলিৎজারের থেকে দ্য জার্নাল নামে একটি পত্রিকার স্বত্বাধিকারী কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই ইতিহাসের সূত্রপাত। নিজের পরিবারের কারো কাছ থেকে অন্য কারো হাতে পত্রিকার স্বত্বাধিকারী চলে যাওয়ার ব্যাপারটি জোসেফ পুলিৎজার কিছুতেই মানতে পারছিলেন না।

 

যার ফলে তিনি ১৮৮৩ সালে ৩,৪৬,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয়ে জে. গোল্ডের কাছ থেকে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড নামে একটি পত্রিকার স্বত্বাধিকারী কিনে নেন। জন্মস্থান হাঙ্গেরিতে হলেও পুলিৎজার তার সাংবাদিকতা ও লেখালেখি সংক্রান্ত বিষয়াদির সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রেই থিতু হন।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

তবে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকাটি সে সময় বছরে গড়ে চল্লিশ হাজার ডলারের মতো লোকসান গুনছিল। এদিকে নিউইয়র্ক জার্নাল ও নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড, পত্রিকা দুইটিকে কেন্দ্র করে হিয়ার্টজ ও পুলিৎজার দুজনই মেতে উঠলেন স্নায়ুযুদ্ধে। পুলিৎজার বেশি খ্যাতির আশায় নিজের পত্রিকা নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডে ছাপতে থাকলেন একটার পর একটা রমরমা, মুখোরোচক খবর, দর্শক ও পাঠকপ্রিয় শিরোনামে।

 

তিনি রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্ট নামে একজন পেশাদার কার্টুনিস্টকেও পর্যন্ত নিয়োগ করলেন ও তাকে নির্দেশ দিলেন ব্যঙ্গরসাত্মক কার্টুন আঁকতে। রিচার্ড ফেন্টো প্রতিদিন নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের প্রথম পাতায় আঁকতে থাকলেন, ‘হোগানস অ্যালি’ নামে কমিক স্ট্রিপ। সামাজিক প্রাত্যাহিক ক্রিয়াকলাপ, বেসুরো সামাজিক অবস্থা এবং আরও বেশ কিছু বার্তা পাঠানো হতো এই কমিক স্ট্রিপের মাধ্যমে যার বেশিরভাগই ছিল পক্ষপাত দোষে দুষ্ট।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

এই কমিক স্ট্রিপ সাজানো হতো বেশ ক’জন শিশুকে কেন্দ্র করে যেখানে মূল চরিত্রের অধিকারী শিশুটি দেখতে ছিল ইয়েলো বা হলুদ বর্ণের। এজন্য তাকে ইয়েলো কিড বা হলুদ শিশু বলে সম্বোধন করা হতো। এই ইয়েলো কিড বা হলুদ শিশুটিকে ঘিরেই পুলিৎজার ও হার্স্টের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভিন্ন মাত্রা পেলো।

 

স্নায়ুযুদ্ধের ফলস্বরূপ তাই হিয়ার্টজ একটি যুগোপযোগী চাল চাললেন। তিনি নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের কার্টুনিস্ট রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্টকে বেশি বেতনের প্রলোভনে নিজের অধীনস্থ করে নিলেন ও নিজের পত্রিকা নিউইয়র্ক জার্নালে প্রতিদিন আট পৃষ্ঠাজুড়ে ঠাঁই দিলেন সেই কমিক স্ট্রিপ দ্য ইয়োলো কিডস।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় রাগে, ক্ষোভে পুলিৎজার আশ্রয় নিলেন ভিন্ন এক পন্থার। তিনি তখন কার্টুনিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিলেন জর্জ চি. লুকস নামে অন্য আরেকজন কার্টুনিস্টকে। এভাবে দুটো পত্রিকাতেই নিয়মিত ছাপা হতে থাকলো ইয়েলো কিডস।

 

আর এসবের ভিড়ে তিলে তিলে গড়ে উঠলো এক ধরনের নোংরা সাংবাদিকতা। দ্য নিউইয়র্ক সানের সম্পাদক চার্লস এ. ডেনা এই নোংরামির নামকরণ করলেন ‘ইয়েলো জার্নালিজম’ বা হলুদ সাংবাদিকতা নামে। আর এ নামকরণের কারণ মূলতঃ সেই কমিক চরিত্র হলুদ শিশু।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা ধীরে ধীরে চটকদার গালগপ্পো ও মিথ্যা সংবাদের লাগামহীন প্রচার মাধ্যম হয়ে উঠলো নিউইয়র্ক জার্নাল ও নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকলো তাদের পাঠক সংখ্যা এবং মধ্যবর্তী দ্বন্দ্বও। তাদের এই রোষানলে পড়ে এমন এক শ্রেনির পাঠক সম্প্রদায় গড়ে উঠলো যারা ভিত্তিহীন, অর্ধসত্য সাংবাদগুলোও লুফে নিতে উৎসুক থাকতো।

 

একটা সময় হিয়ার্টজ চাললেন আরও একটি চাল। দুই সেন্ট থেকে এক লাফে এক পেনিতে নিয়ে আসলেন তার পত্রিকার মূল্য। বেকায়দায় পড়লেন পুলিৎজার। প্রাইস ওয়্যার বা মূল্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে পুলিৎজারকেও বাধ্য হয়ে নিজ পত্রিকার মূল্য হ্রাস করতে হলো। এই দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যে, তারা একে অপরকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করতেও কুণ্ঠাবোধ করলো না।

 

হলুদ সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা

তবে ইতিহাসের পাতায় এই হলুদ সাংবাদিকতা আরও ব্যাপকভাবে কলুষিত হয় তখন, যখন কিউবার হাভানাতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজডুবির ঘটনায় মিথ্যা দায় চাপানো হলো নির্দোষ স্পেনের ওপর। এই জাহাজডুবির ঘটনায় আগুনে ঘি ঢেলে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করতে থাকে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ও নিউইয়র্ক জার্নাল।

 

তাদের এই ঘটনাটিকে ঘিরে বানোয়াট, মিথ্যাচারের বশবর্তী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র উসকে যায়। যার ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় ও প্রাণ যায় দু’দেশের বহু সৈনিকের সঙ্গে সঙ্গে হাজারো বেসামরিক নিরপরাধ মানুষের। এই যুদ্ধটি চলাকালীন পত্রিকা দুটির ব্যাপক চাহিদা বাড়ে এবং সরবরাহ ১৭ লাখে পৌঁছে যায়।

 

তবে হলুদ সাংবাদিকতার বিষয়টি বাদ দিলে আমাদের অস্বীকার করার জো নেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটিতে জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হিয়ার্টজের অবদান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews
%d bloggers like this: