রেখা মনিঃ
গত ২ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ সকাল অনুমানিক ৮:৩০ ঘটিকার সময় পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মমিনপুর এন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০ গজ উত্তর পাশে লালমনিরহাট টু বুড়িমারী মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ঢালের নিচে একটি অজ্ঞাতনামা অনুমানিক ১৮/২০ বছর বয়সী মহিলার রক্তাক্ত অর্ধনগ্ন মৃতদেহ স্থানীয় লোকজন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার, লালমনিরহাট জনাব আবিদা সুলতানা, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়সহ সহকারি পুলিশ সুপার, বি-সার্কেল, অফিসার ইন-চার্জ, পাট্রগ্রাম থানা, ক্রাইমসিন ইউনিট, সিআইডি, রংপুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভিকটিমের মৃতদেহ পর্যবেক্ষণে অসনাক্তকৃত লাশ বিবেচনায় পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় ক্লুলেস হত্যাকান্ড হিসাবে সূত্রোক্ত মামলা রুজু হয়। গত ১২ -০১-২০২১ তারিখ সিআইডি, রংপুর ভিকটিমের নাম-ঠিকানা হামিদা আক্তার@নারগিস @ সুরমা (২৪), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাং-ভরডোবা, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ভিকটিমের পরিচয়ের সূত্র ধরে পুলিশের একটি চৌকস তদন্ত দল আন্তরিক প্রচেস্টায় বিভিন্নমূখী ও দীর্ঘ তদন্তে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নারায়নগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মূল আসামী সনাক্তসহ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বিবরণঃ ভিকটিম হামিদা আক্তার @নারগিস @সুরমা(২৪), (স্বামী পরিত্যক্তা নিঃসন্তান) পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাং- ভরডোবা, থানাঃ ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ এর সাথে অত্র মামলার ঘটনার অনুমানিক তিন বছর পূর্ব হতে ট্রাক চালক শেরপুর জেলা নিবাসী আসামী মোঃ জিরাব আলী (২৮) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এক সময় শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়। ফলে ভিকটিম বিভিন্ন সময়ে তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে তার বাড়ী পর্যন্ত গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে। কিন্তু আসামী মোঃ জিরাব আলীর পূর্বের দুই স্ত্রী ও সন্তানাদি থাকায় সে কোনভাবেই ভিকটিমকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। ভিকটিমের অব্যাহত চাপে অিতিষ্ট হয়ে আসামী মোঃ জিরাব আলী পথের কাঁটা সরানোর উদ্দেশে ভিকটিম হামিদা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
মামলার ঘটনার পূর্বের দিন ৩০-১১-২০২০ তারিখ আসামী ট্রাক চালক জিরাব আলী তার ভাতিজা হেলপার মোঃ শাহিনুর ইসলাম শাহিনসহ ট্রাকে ভাড়ার মালমাল নিয়ে ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে রংপুরে আসার পথে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আসামী জিরাব আলী ভিকটিমকে রংপুরে আসতে বলে। ঐদিন সন্ধ্যায় তারা অনুমানিক ৭/৮ টার দিকে রংপুর সাতমাথায় পৌঁছে ভিকটিমকে তাদের ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে রংপুর পীরগাছা ও কুড়িগ্রাম শহরে মালামাল আনলোড করে। ০১-১২-২০২০ তারিখ সকাল অনুমানিক ১১:৩০/১২:০০ টার দিকে তারা ভিকটিমসহ খালি ট্রাক নিয়ে পাটগ্রাম থানাধীন বাউরা বাজারে আসে। সেখানে স্থানীয় ট্র্রাকের দালাল মোঃ শমসের আলীর মাধ্যমে বড়খাতায় গিয়ে ভূট্টার ভাড়া ধরার চেষ্টা করে। ঐদিন ভাড়া ধরতে না পারায় স্থানীয় অপর দালাল মোঃ শফিকুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করে পরের দিনের জন্য একটি খড়ের ভাড়া ঠিক করে। একইদিন (০১-১২-২০২০) সন্ধ্যা থেকে বাউরা বাজারের আসেপাশে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে আসামী মোঃ জিরাব আলী ট্রাকের ভিতরেই ভিকটিমের সাথে শারীরিক মেলামেশা করে। অতঃপর রাত অনুমান ১১:০০/১২:০০ টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে এসে তাদের ট্রাক দাড় করিয়ে ট্রাকে থাকা ত্রিপল দিয়ে ট্রাকের সামনের অংশ ঢেকে দেয়। আসামী জিরাব আলী তার ভাতিজাকে ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে দিয়ে ভিকটিমের সাথে শারীরিক মেলামেশার জন্য তাকে অর্ধনগ্ন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ট্রাকে থাকা বালিশ দিয়ে ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে। একপর্যায়ে ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে পড়ায় তাকে ট্রাক থেকে ফেলে দিলে ভিকটিম নিচে গড়িয়ে পড়ে যায়। তখন সে তার ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিনকে বলে ওকে মার এখনও মরে নাই। তখন ভাতিজা শাহীন গাড়ীতে থাকা লোহার লিভার পাইপ দিয়ে ভিকটিমের মাথায় একটি ও পিঠে দুইটি আঘাত করে।
এরপর তারা ট্রাকে থাকা বালিশ, কাঁথা, শপিং ব্যাগ ঘটনাস্থলে ফেলে দিয়ে ভাতিজা শাহিন ট্রাক চালিয়ে নিয়ে বড়খাতা পেট্রোল পাম্পে গিয়ে ট্রাকের ভেতরেই রাত্রী যাপন করে। পরের দিন অর্থাৎ ০২-১২-২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ০৭:০০ টায় তারা ট্রাক নিয়ে বাউরা বাজারে এসে সারাদিন বাউরা বাজারের আশপাশ এলাকা থেকে দালালের মাধ্যমে খড় সংগ্রহ করে ঐদিন রাত্রী অনুমান ০৯:০০/১০:০০ টার দিকে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে বাউরা বাজার ত্যাগ করে।
মূল আসামী গ্রেফতার ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণঃ লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানা পুলিশ পুলিশ সুপার লালমনিরহাটের নির্দেশনায় শেরপুর জেলা ও নারায়নগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এবং একপর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির প্রযুক্তি সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামী ট্রাক ড্রাইভার ১। মোঃ জিরাব আলী(২৮), পিতা-মোঃ কুবেদ আলী, মাতা-মোছাঃ জুলেখা বেগম, সাং- ভাতশালা(০৪ নংওয়ার্ড), ইউপি-ভাতশালা, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুরকে ও তার আপন ভাতিজা ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সংশ্লিষ্ট ট্রাকের হেলপার আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু ২। মোঃ শাহিনুর ইসলাম @শাহিন(১৫), পিতা-মোঃ জিলামুদ্দিন @জিরামুদ্দিন, মাতা-মোছাঃ নাজমা বেগম, সাং-ভাতশালা(০৪ নংওয়ার্ড), ইউপি-ভাতশালা, থানা- শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুরকে গত ২০-০৪-২০২১ তারিখে গ্রেফতার করে।
উদ্ধারঃ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত তার নিজস্ব ট্রাক ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৪৭৪৭ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্বীকারোক্তিঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়েই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে এবং ২২/০৪/২০২১ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে তারা উভয়েই ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
সূত্রঃ লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০২-১২-২০২০ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড