অবশেষে নওগাঁর মহাদেবপুরের প্রতিবন্ধী শিশু শিহাব কে উদ্ধার; নৈশ প্রহরী আটক:
রেখা মনি,নিজস্ব প্রতিবেদক:
নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রতিবন্ধী শিশু শিহাবকে নির্যাতনের পর হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটক রাখার ঘটনায় বকুল(৫০) নামের একজন নাইট গার্ড আটক এবং অসহায় শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়াল নওগাঁ জেলা পুলিশ ।
আজ ৩০ জুলাই শুক্রবার সকাল ১০ টায় নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার বাগাচারা গ্রামে নির্মাণাধীন একটি এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনে মোবাইল ফোনের সিম চুরির অপবাদে মারপিট করে হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটক করে রাখার দায়ে বকুল(৫০) নামের একজন নাইট গার্ডকে আটক করেছে মহাদেবপুর থানা পুলিশ।
বাগাচারা গ্রামের ভ্যান চালক খোরশেদের একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী শিশু শিহাব(১৫) স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।নওগাঁ সদরের শিকারপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে বকুল প্রায় দুই মাস পূর্বে নির্মাণাধীন বাগাচারা এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনে নাইট গার্ড এর চাকরি নেই।
শিহাব প্রায়ই নির্মাণাধীন ঐ গ্যাস স্টেশনে গিয়ে বকুলের সাথে গল্প করত। শিহাব তার নিকট তাদের গাভীর দুধও বিক্রি করত। মাঝে মাঝে সে বকুলের মোবাইলও ঠিক করে দিত।
ঘটনার দিন সকাল দশ টার দিকে শিহাব এবং আরেক প্রতিবেশী শিশু ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার পথে বকুল তাদের ডেকে তার মোবাইল থেকে নম্বর বের করে দিতে বললে শিহাব মোবাইল নিয়ে দেখে তাতে সিম নেই।
বকুল, শিহাবকে সিম চুরির দায়ে দায়ী করে তাকে বকুলের থাকার জন্য নির্মিত একটি টিনের বেড়ার ঘরের মধ্যে রেখে অপর শিশুকে পাঠিয়ে দেই।
এরপর বকুল শিহাবকে লোহার রড দিয়ে মারপিট করে দড়ি এবং তার দিয়ে হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটক রাখে। পরবর্তীতে বকুল শিহাবের বাড়ীতে গিয়ে শিহাবের মাকে বলে যে শিহাব তার সিম চুরি করেছে। শিহাবের মা বকুলকে শিহাব কোথায় তা জিজ্ঞেস করে।তার কথায় সন্দেহ হলে শিহাবের ফুফু তার পিছে পিছে যায়।
বকুল ঘরের তালা খুলতে টালবাহানা শুরু করলে শিহাবের ফুফু জানালা দিয়ে দেখে যে শিহাব হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।
তখন সে চিৎকার শুরু করলে বকুল কৌশলে পালিয়ে যায়। মূহুর্তে সেখানে শত শত লোক উপস্থিত হয়। উত্তেজিত জনতা ঘরের তালা ভেঙে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আহত শিহাবকে উদ্ধার করে।
নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম বিষয়টি জানতে পেরে সাথে সাথেই মহাদেবপুর থানা পুলিশকে সেখানে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
নওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে জনগণের সহায়তায় বকুলকে আটক করলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। পুলিশ দ্রুত আহত শিহাবকে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
করোনাকালীন সময়ে গরীব ভ্যান চালক বাবার পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন সেখানে আবার আহত সন্তানের চিকিৎসার কথা ভেবে শিহাবের বাবা অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানতে পেরে মানবিক পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম আহত শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেন এবং আর্থিক সহায়তাসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম) গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহাদেবপুর সার্কেল মাইনুল ইসলাম ও মহাদেবপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে ভিকটিম ও তার পরিবারের নিকট পাঠান।
আটক বকুলের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..