শুধু অস্ত্র নয়, বগুড়ার এমপি রেজাউল করিম বাবলুর ফেসবুকে এবার নগ্ন ছবিরও দেখা মিলেছে। এর আগে বগুড়া-৭ আসনের আলোচিত এমপির হাতে পিস্তলসহ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। গত শুক্রবার থেকে পিস্তলসহ এমপির ছবি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গতকাল তার টাইমলাইনে মিলেছে অশ্নীল ছবির সন্ধান। ছবির বিষয়টি নিয়ে গতকালই তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বাবলু। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান।
কীভাবে অস্ত্রের পর নগ্ন ছবি নিজের ফেসবুকে গেল- এ ব্যাপারে রেজাউল করিম বাবলু গণমাধ্যমকে বলেন, হয়তো কেউ আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জেনে গেছে। এরপর ওই ব্যক্তি ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রথমে অস্ত্রের ছবি ও পরে নগ্ন একটি ছবি দিয়েছে। পরে আমি ওই নগ্ন ছবি ডিলিট করে দিয়েছি। তবে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়নি।
এমপি আরও জানান, মাসখানেক আগে তিনি অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে অস্ত্র কিনতে মতিঝিলের ‘আলী আর্মস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যান। সেখান থেকে ৭৫ হাজার টাকায় একটি পিস্তল কিনেছেন। অস্ত্র কেনার সময় তার সঙ্গে পাঁচ/৭ জন কর্মী ছিল। তারা সব সময় তার সঙ্গে থাকে। অস্ত্র নেড়েচেড়ে দেখার সময়ই হয়তো কোনো কর্মী ছবি তুলে ফেলেছিল, যেটি পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়।
রেজাউল করিম বাবলু আরও জানান, অস্ত্রসহ ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই তাকে ফোন করেছে। জনসমক্ষে প্রদর্শন বা কাউকে লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করেননি দাবি করে তিনি বলেন, যেখান থেকে অস্ত্র কিনেছি, সেই জায়গাটি কাচের গ্লাসে আবৃত। যখন আমি অস্ত্র দেখছিলাম, তখন গ্লাসের বাইরে থেকে কেউ আমার ছবি তুলেছিল।
তেজগাঁও থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এমপি একটি জিডি করেছেন। কে বা কারা এ ঘটনায় জড়িত, আমরা খুঁজে দেখব।
‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’-এর বিধানে বলা আছে, ব্যক্তি পর্যায়ে পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেলের লাইসেন্স পেতে হলে পরপর তিন বছর তিন লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। শটগানের জন্য নূ্যনতম এক লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান আছে। তবে এমপি, সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। এই নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২৫(গ) ও ২৫(ক) অনুযায়ী লাইসেন্স থাকলেও অস্ত্র প্রদর্শন না করার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
জানা গেছে, এমপি বাবলু গত বছর এক লাখ দুই হাজার টাকা আয়কর জমা দিয়েছেন।
এলাকায় রেজাউল করিম বাবলু ‘গুলবাগী’ হিসেবে পরিচিত। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনটি ‘বিএনপির দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। এটিকে ‘জিয়া পরিবারের আসনও’ বলা হয়ে থাকে। ১৯৯১-২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি প্রভাবাধীন ওই আসনে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বাবলুর এমপি হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। এমপি হওয়ার আগে প্রায় অখ্যাত ছিলেন তিনি। গত নির্বাচনে বিএনপি গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন মনোনয়ন পান। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ না করায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। একেবারে শেষ পর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দেয় বিএনপি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ে এক লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বাবলু।
নির্বাচনী হলফনামায় বাবলু বলেছিলেন, তার বার্ষিক আয় কৃষি থেকে তিন হাজার ও ব্যবসা থেকে দুই হাজারসহ মোট পাঁচ হাজার টাকা। ছিল ছয় ভরি স্বর্ণ। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমানো টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে। সংসদ সদস্য হওয়ার দু’মাস পর বাবলু ৩৪ লাখ টাকার একটি গাড়ি কিনেও আলোচনায় এসেছিলেন।