বিজন কান্তি রায় প্রতিবেদকঃ
‘অ্যাহোন মোগো সংসার চালানো দায়’
নাসির হাওলাদার, বয়স সবে ২৫ বছর। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। খুঁটা জেলে হিসেবে কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগরে মাছ ধরাই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এ দিয়েই ‘দিন আনি, দিন খাই’ করে চলে তার সাত সদস্যের সংসার। ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তাই ভীষণ কষ্টে আছেন তিনি।
নাসির বলেন, ‘যহোন বেশি ইলিশ পাই, তহোন সংসার ভালাই চালাই। তয় এই মৌসুমে গাঙে ইলিশের দ্যাহা নাই। মুই এই ১০-১২ বছর ধইর্যা গাঙে ইলিশ ধরি, কিন্তু এই রহোম ইলিশের আকাল দ্যাহি নাই। হেইয়ার ওপর আবার ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ কইর্যা দেওয়ায় মোরা অনেক বড় কষ্টে আছি। ২০ কেজি চাউল দেওয়ার কথা আছিলো, হেইয়াও অ্যাহোনও পাই নাই। এক সপ্তাহ তো চইল্যাও গ্যাছে। অ্যাহোন মোগো সংসার চালানো দায়।’
একই কথা বললেন কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খুঁটা জেলে নজরুল মোল্লা (৪৫)। স্ত্রী-সন্তানসহ তারও সাত সদস্যের সংসার। জানালেন, ইলিশ তো ধরতেই পারছেন না, সরকারের ২০ কেজি চালও এখনও পাননি। আর শুধু চাল দিয়েই বা হবে কী? এর সঙ্গে ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মালপত্র কিনবেন কীভাবে? বড় কষ্টে চলছে তার দিন।
নাসির আর নজরুলের মতো একই অবস্থা পটুয়াখালীর উপকূলের কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকার সব খুঁটা জেলেদের।
ইলিশ সম্পদ রক্ষায় প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের অবাধ ও নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এমনকি এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও মজুদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সময়কালে মা ইলিশ সাগর থেকে উপকূলের মিঠাপানিতে ছুটে আসে এবং ডিম ছাড়ার পর আবার সাগরে চলে যায়। মা ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য ২০০৬ সাল থেকে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে সরকার। সরকারের এই নির্দেশনা মান্য করে গভীর সমুদ্রের জেলেদের মতো উপকূলের খুঁটা জেলেরাও ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছেন এবং তাদের খুঁটা নৌকাগুলো
কুয়াকাটার সমুদ্র তীরে সারি সারি করে উঠিয়ে রেখেছেন।
কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকায় প্রায় তিন হাজার ৭০০ খুঁটা জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে কুয়াকাটা এলাকায় দুই হাজার ৩০০ এবং চরমোন্তাজে এক হাজার ৪০০ খুঁটা জেলে রয়েছেন। এসব খুঁটা জেলের বেশিরভাগেরই নিবন্ধন হয়নি। ফলে সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে তারা। আবার যাদের নিবন্ধন হয়েছে, তারা ২২ দিনে ২০ কেজি করে ভিজিডির চাল পাবেন বটে, কিন্তু এই চাল দিয়ে তাদের ৮ থেকে ১০ দিন যাবে। বাকি ১২-১৪ দিন কাটাবেন কীভাবে? এসব জেলের দাবি, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে চালসহ ডাল, তেল, লবণ দেওয়া হোক। তাহলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোনো জেলেই আর গাঙে মাছ ধরতে যাবেন না। সংসারে অভাব থাকার কারণেই তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে গাঙে মাছ শিকারে যান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সরকারি সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল পেয়ে যাবেন নিবন্ধিত জেলেরা। ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়ার দাবি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অতিদরিদ্র ও অসহায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথাও ভাবছে সরকার।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy