শেখর চন্দ্র সরকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
মাগো আমি তোমার ভাষায় কথাবলি তোমারি ভাষায় গান গাই। বাংলাদেশ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ।
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।বাঙালি ইতিহাসের অন্যতম একটি দিন। বাঙালি কে সম্মান জানানোর অন্যতম একটি দিন বললেও ভুল হবে না। তাইতো “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙালির এই দিনটি। বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির আত্ম-অম্বেষায় যে ভাষা চেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা ও বিক্ষোভ এর শুরু। ১৯৪৮ সালেও আন্দোলন থেমে ছিলনা তার পর গর্জে ওঠা বাঙালি যেন প্রাণ হাতে নিয়ে নেমে পড়ে ১৯৫২ সালের এই দিনে।
সেই দিন সকালের সূর্যটা ঢাকার নীল আকাশকে যেন মুহূর্তেই রক্তে রঙিন লাল রং এ বদলে দিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে আর রফিক, বরকত,জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ভাষার জন্য রাজপথেই প্রান বিলিয়ে দেয়। এই ঘটনার ইতি এখানে ঘটেনি প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকার জনগন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়।
নির্যাতিত বাঙালি ছাত্রজনতা প্রতিবাদ জানাতে ২২শে ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে পড়ে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের আত্মার প্রতি সমবেদনা জানাতে অংশগ্রহণ করে। সেই টগবগে ছাত্ররা ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলে স্মৃতিস্তম্ভ কিন্তু তৎকালীন সরকার ২৬শে ফেব্রুয়ারি তা গুঁড়িয়ে দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে ো নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৭মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ সালে জাতীয় সংসদে বাংলা ভাষা প্রচলন বিল পাশ হয়। ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে তা কার্যকারী হয় । ২০১০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য রাজপথে আন্দোলন হয়। পাকিস্তানি সরকারি বাহিনীর গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়ে প্রান দেয় বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।
রক্ত ও প্রানের বিনিময়ে সেই মাতৃভাষা কে বিশ্বের বুকে ঠাই করে নিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে প্রথম উদ্যোক্তারা হলেন কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে প্রথম প্রস্তাব করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তাঁরা সেখানে বলেন বাঙালি জাতি মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যা ছিল তাদের মাতৃ ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেসকোর ৩০তম অধিবেশন বসে। ইউনেসকোর সেই সভায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।
২১ ফেব্রুয়ারির ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ শুধু বাঙালির বাংলা ভাষা’র বিশ্বজয় নয়, পৃথিবীর সব মাতৃভাষার জয় নিশ্চিত হয়েছে। সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে রাত বারোটায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, সরকারি ও বেসরকারি দলের নেতাকর্মীসহ বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা শ্রদ্ধার সহিত দিনটিকে স্মরণ করবে।