আজ সেই ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশী দিবস!
শেখর চন্দ্র সরকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
আজ বুধবার ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। বাংলার জন্য মানুষের জন্য ট্রাজেডির দিন।
ইতিহাস কথা না বললেও ইতিহাসবিদরা লিখতে কখনো বভোলেন না নবাবের সেনাবাহিনীর তুলনায় ইংরেজদের সেনা সংখ্যা ছিল অনেক কম। মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা না করলে নবাবের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত ছিল। আপন মানুষই নিজেদের ক্ষতি করে এটাই তার জলন্ত প্রমান । নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে সেদিন যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন পরবর্তীতে তাদের কারোই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।
দুইশত তেষট্টি বছর আগে ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আম্ল কাননে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এক যুদ্ধে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজিত হয়।সেদিন কলুষিত হয়েছিল বাংলার আকাশের সূর্যাস্ত। মীরজাফর আলী খান গংদের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ এখনো দিনটিকে স্মরণ করতে ভোলেনি কখনও ভুলবেও না।
তখন ১৭১৯ সাল মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরই বাংলা বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে বসেন সুজাউদ্দিনখাঁ। অতঃপর আসেন আলীবর্দী খাঁ ক্ষমতায়। ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে তরুণ দীপ্ত এক নবাব হিসেবে আবির্ভূত হন। তারুণ্যের অধিপতি নবাব এর সাথে ইংরেজদের বিভিন্ন কারণে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়।
সেই সুযোগে অপক্ষমতার এক দাবি করেন নবাবের খালা ঘষেটি বেগম ও সেনাপতি মীর জাফর। সেই সময় তরুন ক্ষমতাধর নবাবের সাথে না পেরে তারাই ইংরেজদের সাথে নীলনকশা করে নবাবের পতন ঘটান।
সেই সময় নবাবের খুব কাছের লোক ছিলেন উমিচাঁদ। ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ নবাবকে পরাজিত করার প্রথম দাবার গুটি হিসেবে উমিচাঁদ কেই বেছে নেন এবং তাকেই গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এদিকে আর এক নেপথ্য নায়ক মীর জাফর তা আঁচ করতে পেরে নবাব তাকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেন। কুটচালে পারদর্শী মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করায় নবাবের মন গলে যায় এবং মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতি পদে পুনর্বহাল রাখেন।
ইতিহাস সাক্ষী দেয়, ইংরেজদের পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গকে সাহায্য করা, মীরজাফরের সিংহাসন লাভের বাসনা ও ইংরেজদের পুতুল নবাব বানানোর পরিকল্পনা, ঘষেটি বেগমের সাথে ইংরেজদের যোগাযোগ,
ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ সংস্কার, কৃষ্ণ বল্লভকে কোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় দেয়া ইত্যাদির জন্যই ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সকাল সাড়ে ১০টায় ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মীর মদন ও মোহন লালের বীরত্ব সত্বেও জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ কুচক্রী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে।
মীর জাফরের এই চরিত্র এখন বাংলার মানুষের মুখে মাঝ মাঝেই উচ্চারিত হয়। ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে উপমহাদেশের মানুষের কাছে ‘মীরজাফর’ বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইংরেজরা দেশ শাসনের নামে প্রায় ২০০ বছর নির্যাতন করেন।
সবকিছুরই শেষ আছে তাই উপমহাদেশের মানুষের আন্দোলনের মুখেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত দু’টি দেশ সৃষ্টি হয়, আর তুমুল আন্দোলনের কারনে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে বাধ্য হয় ইংরেজরা।
অবসান ঘটে প্রায় ২০০বছরের ইংরেজ শাসনের।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..