প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ১১:২৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২১, ৩:৫০ এ.এম
কাইয়ুম মাহমুদ আকাশ
আজ ২৫ এপ্রিল রবিবার সলঙ্গা নৃশংসতম গণহত্যা দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী সলঙ্গায় এদিনটিতে চালায় বর্বর গণহত্যা। পাকিস্তানী সৈন্যরা একযোগে ব্রাশ ফায়ারে সলঙ্গায় হত্যা করে প্রায় ২ শতাধিক মুক্তিকামী ও নিরীহ মানুষকে। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার মধ্যপাড়া চড়িয়া, পাটধারী, কালিবাড়ী, শিকার মগড়াপাড়া, চড়িয়া শিকার দক্ষিণপাড়া, গোলকপুর, কাচিয়ায় চর সংঘটিত হয়েছিল এ গণহত্যাযজ্ঞ।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একটি দল সৈয়দপুর হতে ঢাকা যাওয়ার সময় বর্তমান উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে পথে ব্যারিকেড পেয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন গ্রামের নিরীহমানুষ ঘুমিয়ে ছিল। পাকি বাহিনী সুর্যোদয়ের পূর্ব হতে গুলি চালাতে শুর“ করে এবং একটানা সকাল ৯ টা পর্যন্ত গুলি চালায় নিরীহ মানুষের উপর। ভস্মীভূত করে দেয় এলাকার ঘরবাড়ী। পশুত্বের হাত হতে রেহাই পায়নি কোলের শিশু পর্যন্ত।
পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চড়িয়া মধ্যগ্রামের আবুল কালাম (কাঙ্গাল মÊল) জানায়, ঐ দিন সকালে পাকিস্তানী হায়েনা বাহিনী আব্দুল মজিদের পুকুরের পাশে, ইয়ার আলীর পুকুরের পাশে সারিবদ্ধ দঁাড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। ভাগ্যের জোরে তিনি ৩টি গুলি খেয়েও বেঁচে যান। একই ঘটনায় বেচে আছেন আমান আলী।
পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাহাজ উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, আদম আলীম, ইউছুব আলী, মেছের উদ্দিন মুন্সী, ছলিম উদ্দিন, আজিজুল হক, গগন মÊল, ডাঃ শাহজাহান আলী, মোহাম্মদ আলী, তারা সরকার, কানছু সরকার,
মুজিবর রহমান, ফজল প্রামানিক, আমানত আলী, আবু তাহের, আহসান আলী, শাহজাহান, কাফি, আবু তালেব, ছানু ফকির, কাঞ্জু প্রামানিক, আব্দুস ছাত্তার, মাহাম খা, দারোগ আলী, মজিবর রহমান, আজিজ, হাকিুমুদ্দীন, আব্দুল মজিদ, পাওমুসা, শমসের আলী, তারা প্রামানিক। এছাড়াও ঐদিন পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০ জন, গোলকপুর গ্রামের ৫ জন, কাচিয়ার গ্রামের ১জনসহ নাম না জানা অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীরা। আজও বেঁচে আছেন আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল) ও আমান আলী।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মধ্যপাড়া চড়িয়ার বধ্যভূমি ও শহীদ পরিবার আজও উপেক্ষিত। যঁাদের জীবনের বিনিময়ে রক্তস্নাত স্বাধীনতা লাল সূর্য তাদের কাছে আজও কেউ আসেনি সান্ত্বনার বাণী শোনাতে। শহীদ মিনারে স্থানীয় চড়িয়া জনকল্যান সমিতি দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচী হাতে নিলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। শহীদদের পরিবার-স্বজনদের ইচ্ছে দিবসটি রাষ্টীয়ভাবে না হলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি পালনে যথাযথ উদ্যোগী হবে।
চড়িয়া জনকল্যান সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই খাঁন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, প্রতি বছর দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও এবছর করোনা মহামারী আকার ধারণ করায় আমারা সিমিত পরিসরে কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কোরআন খতম, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হবে।