আনোয়ার হোসেন আন্নু: কিছুদিন আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মো. হুমায়ুন। আনুমানিক ৪১ বছর বয়সের এই ব্যক্তির রাজধানীর ফকিরাপুলে ছোট একটি দোকান আছে।
ভর্তির পর প্রথমে তাকে অন্যান্য রোগের জন্য কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়। যার জন্য ৭৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন। এরপর তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। যেখানে সরকারিভাবে করোনার ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হলে, রিলিজের আগে তার কাছ থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিল দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এত টাকার বিল দেখে মাথায় হাত পড়ে অসহায় এই রোগীর।
আজ বুধবার বিকেলে হুমায়ন নামের ওই রোগী গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিল চেয়েছিল। পরে এটা নিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলাম। এরপর আজ তারা শুধু মাত্র ২০ হাজার ৭০০ টাকা বিল রেখে আমাকে রিলিজ দিয়েছে।’
হুমায়ন বলেন, ‘প্রথমে তারা বলেছিল করোনার ফ্রি চিকিৎসা হবে। পরে এত বিল দেখে তো আমি অবাক। অন্য চিকিৎসার জন্য তারা ৭৫ হাজারের একটা বিল দিয়েছিল, সেটাও আমি পরিশোধ করেছি। কিন্তু পরে এত টাকার বিল মেনে নিতে পারছিলাম না।’
‘আমার করোনা আসার পরে আবার দুইটা টেস্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে। তাও আমাকে ছাড়ছিল না। আমার সাথে যাদের নেগেটিভ এসেছিল তারা সবাই চলে গেছে। শুধু আমাকেই রাখা হয়েছিল। পরে গতকাল রিলিজ দিয়ে ২ লাখ ৬৮ হাজারের একটা বিল ধরিয়ে দেয়’, অভিযোগ এই রোগীর।
হুমায়ন বলেন, ‘আরও এক রোগীর এই ধরনের সমস্যা হইছিল শুনেছি। আজ দুপুরে তারা আমাকে দুই দিনের বিল দিতে বলে রিলিজ দেয়। পরে ২ দিনের ২০ হাজার ৭০০ টাকা আমি পরিশোধ করে চলে আসি।’
দুই দিনের বিলের মধ্যে খাবার, হাসপাতালের চিকিৎসকের ফি এবং বেড ভাড়া উল্লেখ করা ছিল বলেও জানান হুমায়ন।
উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল সাইফুর রহমান নামের এক করোনা রোগীর বিল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবি করে রোগীকে আটকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের বিরুদ্ধে। পরে রাতেই এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে ওই রোগী গতকাল রাতে ছাড়া পেয়ে বাসায় গিয়েছিলেন।
অবশেষে বিলের জন্য আটকে রাখা সেই রোগীকে বুধবার টাকা ফেরত দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার স্বজনদের ডেকে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ‘সরি’ বলে ফেরত দিয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে হাসপাতালটি। বুধবাব সন্ধ্যায় সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের কাউকে তারা ফোন করে ডেকেছিলেন। পরে আমার ছোট ভাই আরিফুলকে পাঠানো হয়েছিল। বিকেলে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তার কাছে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে।’
সাইফুর রহমান আরও বলেন, ‘তারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) গত ৩১ মে পর্যন্ত কোনো বিল নেয়নি। শুধু মাত্র ১ ও ২ জুনের বিল কেটে রেখেছে। একই সাথে তারা এই ঘটনার জন্যই দুঃখ প্রকাশ করে সরিও বলেছে।’
এ বিষয়ে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এহতেশামুল হক জানিয়েছেন, মে মাসে সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। তাই ১ এবং ২ জুনের বিল রেখে রোগীকে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেছেন, কোভিড-১৯ নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর বিল সরকার দেবে। এখানে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ১ জুন থেকে তারা বিল নিতে পারবেন।