তৌহিদ আহমেদ রেজা: দুর্বৃত্তের হামলায় আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অবস্থা যথেষ্ট সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসকেরা। তাঁকে বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে গেলেও অস্ত্রোপচার করার মতো পরিস্থিতিতে তিনি নেই বলে চিকিৎসকেরা জানান।
হাসপাতালের পরিচালক দীন মোহাম্মদ বলেন, ইউএনওর মাথার আঘাত অনেক জটিল ও গুরুতর। প্রাথমিকভাবে তাঁকে দেখা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক জাহেদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউএনওর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথার খুলির হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। এটি মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে প্রচণ্ডভাবে। ভেতরে রক্ত রক্ষণ হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল না। ব্লাড প্রেশার কমে গেছে। জ্ঞানের মাত্রা সাধারণ মানুষের মতো নেই; যদিও তিনি কথাবার্তা বলার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রেশার ধরে রাখতে পারছেন না। প্রেশার কমে গেছে। তাঁর পালস বেড়ে গেছে। তিনি রেস্টলেস অবস্থায় আছেন। আগে তাঁকে স্টেবল (স্থিতিশীল অবস্থা) করতে হবে। অপারেশন (অস্ত্রোপচার) করার মতো অবস্থা নেই। এখন অপারেশন করলে বিপজ্জনক হবে। আগে তাঁর অবস্থার উন্নতি করাতে হবে। ব্লাড, স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো ওষুধ দেওয়া হয়েছে।’
ইউএনও কেমন শঙ্কায় আছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহেদ হোসেন বলেন, ‘শঙ্কাটা কতটুকু, বলা কঠিন। তবে উনি সংকটাপন্ন অবস্থাতেই আছেন। ওনার ব্লাড প্রেশার, পালস রেট ও জ্ঞানের মাত্রার অবস্থার উন্নতি না হলে উনি যথেষ্ট বিপজ্জনক অবস্থায় আছেন। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটেও যেতে পারে।’
ইউএনওর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। এই দলে আছেন হাসপাতালের পরিচালক দীন মোহাম্মদ, নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক জাহেদ হোসেন, হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম, চিকিৎসক এম এম জহিরুল হক, চিকিৎসক আমিন মোহাম্মদ খান, চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান ও চিকিৎসক উজ্জ্বল কুমার মল্লিক।
বুধবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরী কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করে।
ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ইউএনওর মাথার বাম দিকে বেশি আঘাত লেগেছে। তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ধাতব কোনো বস্তু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাঁর শরীরের ডান দিক অবশ হয়ে গেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।