আনোয়ার হোসেন আন্নুঃ
ফাতেমা আক্তার পরী, বয়েস ২৮। কখনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কখনো মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, কখনো সমাজসেবা কর্মকর্তা সেজে মানুষকে ফাঁদে ফেলাই তার কাজ। কখনো পুরুষ, কখনো গ্রামের অবলা দরিদ্র অসহায় নারী ও কিশোরীদের ফাঁদে ফেলে নিজের ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করে। করোনা পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করছে আইসিডিডিআরবি অভিযোগ রয়েছে, উঠতি বয়সের যুবক, চাকরিজীবী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সবাইকে ফেসবুকে বা মোবাইল ফোনে কথা বলে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে, ফোনে কথা বলে রুমমেট বানানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলে শিকার ধরতো পরী। তার মন ভোলানো কথায় বহু মানুষ পা দিতেন ভয়াবহ এই ফাঁদে। কিন্তু এ ফাঁদ যে কত ভয়ংকর তা যখন টের পেতো, তখন কিছুই করার আর থাকতো না ভুক্তভোগীদের।পরীকে সেল্টার দেয়ার জন্য রয়েছে রামগঞ্জে অঘোষিত একটি সিন্ডিকেট। যার ফলশ্রুতিতে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কাল্পনিক কোন পরী না, বলছি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের এক প্রতারক পরী বেগমের কথা। বেশ কয়েক মাস থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের এলাকা থেকে ওই পরী বেগমের নানা প্রতারণা খবর এখন ‘টক অব দ্যা রামগঞ্জ’ এ পরিনত হয়েছে। পরীর অশালীন ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী শিরীন আক্তার নামে এক গৃহবধূ একাধিক নারীর পক্ষে বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানের বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরী বেগম (প্রকাশ ফাতেমা আক্তার পরী) রামগঞ্জ পৌরসভার নন্দনপুর গ্রামের ইম্মত আলী ভূঁইয়া বাড়ির আলমগীর হোসেনের স্ত্রী। স্বামী রাজমিস্ত্রী আলমগীর বেশ কয়েকবার স্ত্রীর বেপরোয়া অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেও দফায় দফায় হেনস্তা হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, পরী বেগম সম্প্রতি রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়নের বেচারাম বাড়ির শিরীন আক্তারসহ ২৩ জন দরিদ্র অসহায় নারীর কাছ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বভাতা ও নতুন ঘর করে দেয়ার নাম করে নারীদের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরী বেশ কয়েকদিন আগেও রামগঞ্জ পৌরসভার সাতারপাড়া গ্রামের মিয়া বাড়ির জেসমিন আক্তার কাছ থেকে ৩ হাজার, সুফিয়া বেগমের কাছ থেকে ৮ হাজার, একই গ্রামের মিয়ার বাড়ির সোহাগী বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার, নাসরিন আক্তারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, সুমা আক্তারের কাছ থেকে ৭ হাজার, আকলিমা আক্তারের কাছ থেকে ৭ হাজার, বাচ্চু মিয়ার কাছ থেকে ৬ হাজারসহ অনেকের কাছ থেকে নানা ধরনের ভাতা দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরী বেগম জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। শিরিন বেগম ইউএনও অফিসে যে অভিযোগ করেছে, তা পুরোপুরি সত্য নয়। শিরিন আমাকে মাত্র ২ হাজার ৫শ’ টাকা দিয়েছে। বাকী টাকা সে আত্মসাৎ করে আমাকে দোষারোপ করছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, পরীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রতরণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। খুব দ্রুত বাকী তদন্ত শেষ করে নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, পরী বেগম নামের কোন নারীকে আমরা চিনি না। আমাদের অফিসের নাম বিক্রি করে কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি সে করে থাকে, তাহলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, ফাতেমা আক্তার পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও তার প্রতারণার বিষয়ে আরো বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।