প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ২:৩২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২১, ৪:১৯ পি.এম
ইট ভাটায় স্বপ্ন দেখে কিশোর মারুফ
গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁও ঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে ইট ভাটায় স্বপ্ন দেখে কিশোর মারুফ কায়সার (১৬)।একটি সাইকেল কিনে স্কুলে যাওয়ার,পরিবারের অভাব-অনটন হওয়ায়।শৈশব জীবনের এ স্বপ্ন যেন কুড়ে কুুড়ে খাচ্ছে ।বাবা সামান্য ভ্যানচালক হওয়ায়,অভাব যেন মারুফের জীবনে নিত্য দিনের সঙ্গী।পারেনা পড়াশুনার ফাকে অন্য কিশোদের মত হই হুল্লোর করে ছোটাছুটি করতে,করোনায় বর্তমান সময়ে স্কুল বন্ধ হওয়ায় নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এই কিশোর শিশুটি বেছে নেয় ইটভাটায় কাজ।এখন ইটেই যেন স্বপ্ন হয়ে আছে মারুফের?কাজ করে টাকা জমিয়ে সাইকেল কিনবে।বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোড় করে সাইকেলের প্যাডেল মেরে স্কুলে যাবে।এই কিশোরের বাড়ী সদর উপজেলার আকচা ইউনয়িনের দক্ষিণ বঠিনা গ্রামের বাদল হোসেনের ছেলে।১১ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার আকচার একটি ইটভাটায় গেলে এমনই কথা হয় মারুফের সঙ্গে।মারুফ কায়সার পুরাতন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করত। তার বাবা একজন ভ্যানচালক। হঠাৎ করোনা মহামারির কারণে অর্থাভাবে তাদের পরিবারের আয়-রোজগার কমে যায়।
কিন্তু অর্থের অভাবে মারুফের স্বপ্ন দেখা থামেনি। দারিদ্র্যের কষাঘাতে ইটভাটায় সারিতে সারিতে সাজানো কাঁচা ইট তৈরিতে নেমেছে সে। আর তাই মাটি দিয়ে ইটের বক্সের মতো করে আকার দিয়ে ইট তৈরিতে ব্যস্ত হতে হয় কিশোর মারুফকে। এ কাজের জন্য হাতে-পায়ে কাদা লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছে কিশোর মারুফ। আজ নিজের স্বপ্নের কথা সংবাদকর্মী গৌতমকে বলে মারুফ।মারুফ বলে, যখন স্কুলে যেতাম সব সময় দেখতাম আমার বন্ধুরা সুন্দর সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাইতো। কিন্তু আমাকে যেতে হতো হেঁটে হেঁটে। প্রতিদিন এটা নিয়ে মন খারাপ থাকতো। কিন্তু করার ছিল না কিছুই। কারণ আমি জানি, বাবা একজন গরিব ভ্যানচালক। আরো দুই ছোট ভাই আছে আমার। তারা পড়াশুনা করে। আমি সবার বড়। তাই সংসার চালাতে যেখানে আমার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে আমার জন্য সাইকেল কেনা বা পড়াশুনার খরচ দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই আমার বাবার।যখন আমার বন্ধুরা আমার সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যায় তখনই আমার মনে এটা স্বপ্ন জাগে। একদিন আমিও নেবো একটি ভালো সাইকেল। সাইকেলে প্যাডেল দিয়ে ভোঁ-ভোঁ করে আমিও তাদের সঙ্গে যাবো স্কুলে। এমনই স্বপ্ন নিয়েই প্রতিরাতে ঘুমাতে হতো আমাকে। মারুফ জানায়, একটা সময় এই ইটভাটায় আমার মা খাবার রান্না করতো। সেই সময় আমি আমার মায়ের সঙ্গে আসতাম, দেখতাম কীভাবে করে ইট বানাতে হয়। এরপর আমি আমার মাকে একাধিকবার বলেছিলাম এখানে আমাকে কাজ করতে দিতে, কিন্তু তিনি রাজি হননি। শেষে সবাইকে বুঝিয়ে, স্বেচ্ছায় ইটভাটায় কাজ করতে এসেছি। প্রথমের দিকে কিছুটা কাজ কম পারতাম, কিন্তু এখন অনেক কাজ শিখেছি। এখানে সারাদিন কাজ করলে ৩০০ টাকা করে দেয়। দৈনিক প্রায় এক হাজারের মতো ইট তৈরি করি আমি।মারুফের মা মিনারা বেগম বলেন, অনেকবার মারুফকে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু সে কারো কথা না শুনে এখানে কাজ নিয়েছে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে কেন এই বয়সে টাকা দরকার তখনই সে তার স্বপ্নের কথা বলে ওঠে। কারণ এই অল্প বয়সে সে আমাদের পরিবারের কষ্টের বিষয়টি বুঝেছে। আমার স্বামী একজন সামন্য ভ্যানচালক। তার দেওয়া আয় দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর। সেখানে ছেলের স্বপ্ন কি করে পূরণ করবো।এই ব্রিকস ভাটার ম্যানেজার জানান, একটা সময় মারুফের মা আমাদের এই ভাটায় রান্না করার কাজ করতো। এরপর সে চলে যায়। পরে একদিন এই মারুফ আমার রুমে এসে বলে আমি কাজ করবো ইট বানানোর। যেহেতু ভাটায় কোনো শিশুর কাজ করার নিয়ম নেই,সেই কারণে আমি তাকে বারণ করে দেই। এরপর সে প্রতিনিয়ত আমাদের ভাটায় এসে ঘোরাঘুরি করে ও আমাকে বলে কাজ দেন। পরে আমি তাকে পুনরায় বারণ করলে সে কান্না করে বসে। এ সময় আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে বোঝানোর সময় সে বলে আমার স্বপ্নপূরণের জন্য আমি আপনার এখানে কাজ করতে চাই। তার মুখে সব শুনে আমি তাকে কাজ দেই।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy